Skip to main content

এ দিনটা শুধুই পুরুষের!






নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ব্যঙ্গ করে অনেক পুরুষই বলে থাকেন- পুরুষ দিবস নেই কেন? আবার অনেকে বলেন মার্চ ছাড়া বাকি দিনগুলো হলো পুরুষদের জন্য। একটা দিন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুক নারী

আসলেই কি তাই! ইন্টারন্যাশনাল মেনসে ডে লিখে সার্চ দিন গুগলে। উইকিপিডিয়া ছাড়াও পাবেন একটি সাইট-মেনসডে.ডব্লিউএস। বলেই দিই ১৯ নভেম্বরকে কেন্দ্র করেই এই সাইট। আর এই দিবসটি হলো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। মেন ডে সাইটে এই দিবসের সমর্থকদের তালিকা আছে। সে তালিকায় বাংলাদেশের কোনো সমর্থকেরউল্লেখ নেই। একইসঙ্গে যেসব দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়- তাতেও নেই বাংলাদেশের নাম। এমনকি বাংলাদেশের পত্রিকা নিউজ সাইটের আর্কাইভ খুঁজেও সংক্রান্ত কিছুর হদিস মিলল না

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে প্রথমবারের মতো পালিত হয়। এরপর দিবসটি জাতিসংঘের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশটি দেশে ব্যক্তিগত সাংগঠনিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর উইমেন এন্ড কালচার অব পিসের পরিচালক ইনিবর্গ ব্রেইনিস বলেন, ‘এটা একটা দারুণ আইডিয়া। এটা লৈঙ্গিক ভারসাম্য আনবে।

এই দিবসের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- পুরুষ বালকদের স্বাস্থ্য, লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন, লৈঙ্গিক সাম্যতার প্রচার এবং পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা। এতে পুরুষ বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। গুরুত্বের সঙ্গে তাদের অর্জন অবদানকে উদযাপন করা হয়। বিশেষ করে সমাজ, পরিবার, বিবাহ শিশু যত্নের ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে তুলে ধরাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য

কীভাবে এলো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস:

এই ধরনের একটি দিবসের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬০ এর দশকে। সেই সময়ে নারী দিবসের সঙ্গে সমতা আনতে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে পুরুষ দিবস করার উদ্যোগ নিলেও সেটি ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নেররেড আর্মি এন্ড নেভি ডে পরে এর নামে দেয়া হয়ডিফেন্ডার অব দি ফাদার ল্যান্ড ডে ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি. হ্যারিস সালিনা জার্নালে একটি লেখায় বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন নারী শ্রমিকদের জন্য একটা দিন রাখলেও পুরুষদের জন্য রাখেনি। ষাট থেকে নব্বই দশকের মধ্যে এই ধরনের নানা কথা চালাচালি হলেও সুনির্দিষ্ট দিবস পাওয়া যায়নি

১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মৌসুরী-ক্যানসাস সিটির মৌসুরী সেন্টার ফর মেন স্টাডিজের প্রফেসর থমাস ওস্টারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া মাল্টায় ফেব্রুয়ারি মাসে পুরুষদের উপলক্ষ্য করে কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে নানা কারণে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় তারা। এরমধ্যে মাল্টায় ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অন্যান্য দেশেও একটি পালিত হয়। মাল্টা এই ধারণা নেয় ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো থেকে

ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে দিবসটির উদ্যোগ নেন ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের . জেরোমি তিলকসিংহ। তিনি বলেন, ‘আমি অনূভব করেছি পুরুষদের জন্য কোনো দিবস নেই। কেউ কেউ বলে বাবা দিবস তো রয়েছে। কিন্তু এতে বালক, তরুণ যারা বাবা নন তাদের কী হবে?’

তিলকসিংহের নিজের জীবনের আদর্শ ছিলেন তার বাবা। ১৯ নভেম্বর তার বাবার জন্মদিনও বটে। এছাড়া স্থানীয় একটি খেলার দল লিঙ্গ, ধর্ম জাতিগত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এদিনে। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের দাফতরিক সমর্থন পায়

এই দিনের উল্লেখযোগ্য আয়োজনে থাকে সেমিনার, স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বিশেষ কার্যক্রম, রেডিও টিভি অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী মার্চ, বির্তক প্রভৃতি। প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে এটি নারী দিবসের বিপরীত কিছু নয়। বরং পুরুষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া এর মূল লক্ষ্য। এছাড়া প্রতি বছরে আলাদা আলাদা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- ২০০২ সালে শান্তি, ২০০৩ সালে পুরুষদের স্বাস্থ্য বা ২০০৯ সালে ইতিবাচক অনুকরণীয় আদর্শ। প্রতিটি দেশ নিজের স্থানীয় চাহিদার নিরিখে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করতে পারে

২০০৯ সালে আগের বছরগুলোর নিরিখে কিছু বিষয় উদ্দেশ্য দেওয়া হলো-

. বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের প্রচারণা

. সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশুর যত্ন পরিবেশে পুরুষদের অবদানকে উদযাপন

. পুরুষের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক, আবেগীয়, শারীরিক আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে উঠায় জোর দেয়া

. সামাজিক সেবা, আচরণ প্রত্যাশা এবং আইনের ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের বৈষম্যকে সবার সমানে তুলে ধরা

. লৈঙ্গিক সম্পর্কের উন্নয়ন সমতা

. মানুষের জন্য নিরাপদ উত্তম পৃথিবী গড়া, যেখানে সে নিরাপদে তার সকল সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে

২০১৩ সালে এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্যপুরুষ বালকদের নিরাপদে রাখা এছাড়া মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো হলো-

. পুরুষ বালকদের আত্মহত্যা মোকাবিলা করা

. ভবিষ্যতের ইতিবাচক আদর্শ হয়ে উঠতে বালকদের নিরাপদে রাখা

. পুরুষ বালক নির্যাতন মোকাবিলা

. অসুখ এড়ানো যায় এমন মৃত্যু থেকে তাদের নিরাপদে রাখা

. বাবা পুরুষদের ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে প্রচার করে তাদের সুরক্ষা

নানা উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসকে কেন্দ্র করে মভেম্বর নামের একটি দলও গড়ে উঠেছে। যেখানে গোঁফ হলো পুরুষের প্রতীক। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই দলটি গোঁফ বড় রাখার ইভেন্ট পরিচালনা করে। এই সময় তারা ফান্ড সংগ্রহ করে। পুরুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালায়। তাদের সাইটের নাম মভেম্বর.কম। ২০১২ সালে গ্লোবাল জার্নালের মতে এটি পৃথিবীর শীর্ষ ১০০টি এনজিও একটি

বাংলাদেশে এই দিবস পালন করা না হলেও পাশের দেশ ভারতে অনেক সংগঠনই পালন করে থাকে। এবারের দিবস উপলক্ষ্যে হৃদয়া নামে একটি সংগঠন দারুন কিছু দাবি তুলেছে-

আইনের জালে জর্জরিত ভারতের পুরুষেরা৷ তাদের অধিকার রক্ষায় পৃথক পুরুষ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় তৈরি করতে হবে। স্ত্রী নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হেনস্থার অজুহাতে পুরুষদের হাজতে যেতে হচ্ছে। এটা পুরুষ সমাজের জন্য অপমান৷ ভারতের প্রায় ৮৩ শতাংশ পুরুষ নিজ ঘরে নির্যাতনের শিকার হন৷ তাই পুরুষের অধিকার রক্ষায় শিগগিরই আইন প্রণয়ন করা উচিত৷ যে আইন ঘরে কর্মস্থলে পুরুষকে যাবতীয় মানসিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে৷

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১৯ নভেম্বরকে পুরুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে প্রোস্ট্রেট ক্যান্সার, কোলান ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিকস এইডস নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এই দিবসকে কেন্দ্র করে

(নিউজ এক্সপ্রেস ২৪/ডব্লিউএস/এসকে/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স