নিউজ এক্সপ্রেস প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের
রিজার্ভ চুরির আসল ঘটনা প্রকাশ ও তদন্তের নামে বিদেশিদের হাতে তথ্য তুলে
দেওয়ার ঝুঁকির কথা জানানোয় রোষাণলে পড়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভির হাসান
জোহা।
গত রবিবার রাতে র্যাবের সঙ্গে মিলে রিজার্ভ চুরির তদন্তে তৎপর থাকলেও সোমবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘তানভীর হাসান জোহা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কেউ নয়’।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘সম্প্রতি অনেক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন তানভীর হাসান জোহা নামে জনৈক ব্যক্তি। এতে বিস্মিত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। কারণ ওই ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কেউ নন’।
এতে আরো বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদেনে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি কখনও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন), কখনও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেছেন। তানভীর হাসান জোহা নামের ওই ব্যক্তির কোনো কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের দায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নেই। আলোচিত ওই রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্ত কমিটিও করেনি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ওই ব্যক্তির যে কোনও মন্তব্য তার নিজ দায়িত্বের।’
মন্ত্রণালয়ের এমন বিজ্ঞপ্তির নেপথ্য কারণ অবশ্য ফাঁস করে দিয়েছেন তানভির হাসান জোহা নিজেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকিংয়ের আসল ঘটনা প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ। তারাই এখন বলছেন, আমি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কেউ নই। তারা আমাকে তদন্ত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আমি রবিবার রাতেও র্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কাজে অংশ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি কেউ না হই, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার তদন্তে কীভাবে কাজ করছি? আমাকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কাজে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রবিবার রাতেও র্যাবের তদন্ত দলের সঙ্গে আমি ছিলাম। আমি র্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছি এবং তদন্তে সহায়তা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘রবিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, রিজার্ভের সুইফট কোডের কম্পিউটার আলাদা ছিল না। এটা সাধারণ কম্পিউটারের সঙ্গেই ছিল। এই কম্পিউটারের আলাদা কোন নিরাপত্তা ছিল না।’
জোহা দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশি নাগরিকদের তদন্তে রাখা নিয়ে আপত্তি করেছি। কারণ আমি মনে করে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি হোল (গর্ত) তৈরি করেছে, আর এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাতে তদন্তের নামে তথ্য তুলে দিলে আরও বড় হোল তৈরি হবে। আমি পুরো বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে চাই।’
জানা গেছে, তানভির হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবে কাজ করেন। এটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি নতুন অর্থ বরাদ্দের জন্য দু’মাস ধরে স্থগিত আছে।
সাইবার নিরাপত্তার কাজের সুবাধে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড় বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেন জোহা। এনিয়ে কোথাো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে বিশেষ মহলের রোষাণলে পড়েছেন তিনি।
রবিবারের তদন্তই কাল হলো
রবিবার বিকালে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল ও স্থানীয় আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অর্থ চুরির ঘটনায় তদন্ত করা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট ভারতের নাগরিক রাকেশ আসথানাও উপস্থিত ছিলেন।
দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এ বৈঠকে চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপস্থিত কর্মকর্তাদের। তারা অবশ্য অনেক প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় রাকেশ আসথানা আবার দাবি করেন, ঘটনাটি বাইরে থেকে ঘটানো হয়েছে। কিন্তু দেশীয় আইটি এক্সপার্টরা বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই। আর এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সব প্রমাণও তাদের কাছে আছে।
একপর্যায়ে রাকেশ আস্তানা দেশীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের জানান, তার তদন্ত শেষ হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এরপর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
বৈঠকের দেশীয় আইটি এক্সপার্টরা যে তিনটি আইডি শনাক্ত করেছেন সে বিষয়ে প্রযুক্তিগত প্রমাণ তুলে ধরেন রাকেশ আস্তানার কাছে। তারা রাকেশ আস্তানাকে এও বলেন, সন্দেহভাজন পিসিতে ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় এজাতীয় তথ্য পাওয়া গেছে। দেশীয় প্রযুক্তিবিদরা তাকে আগে এ ডিভাইস ব্যবহারের কারণ অনুসন্ধান করতে বলেন।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, ইউএসবির মাধ্যমে পেনড্রাইভ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়। ইউএসবি হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যা স্বল্প সময়ে কম্পিউটার বা ইলেকট্রিক যন্ত্রে সংযোগ করা যায়। এর মাধ্যমে দ্রুত প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যেমন সম্ভব, তেমনি নতুন কিছু ঢুকিয়ে দেয়াও সহজ।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় ১২ সন্দেহভাজন চিহ্নিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের অধীন ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখা ঘিরে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় আইনশৃংখলা বাহিনীর তদন্ত শুরু হয়েছে।
একজন যুগ্ম পরিচালকের (জেডি) নেতৃত্বে আট কর্মকর্তা এ বিভাগে কাজ করেন। গোয়েন্দাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট যে, ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখার মাধ্যমেই অর্থ কেলেংকারির এই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা ১২ জনের একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে দু’জনকে অতি সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করেছে তদন্তসংশ্লিষ্ট টিম। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে যারা কর্মরত তারা সবাই বিষয়টি জানেন।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, ডিলিং রুম শাখায় দু’জন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা হলেন- জোবায়ের বিন হুদা ও মিজানুর রহমান। এছাড়া উপপরিচালক (ডিডি) পদে রয়েছেন লাকী সুলতানা, আবদুল্লাহ সালেহ ও প্রভাষ চন্দ্র সিংহ এবং সহকারী পরিচালক (এডি) পদে রয়েছেন আলমগীর হোসেন, রফিক আহমেদ মজুমদার ও সনজিৎ রায়। এদের মধ্যে যে দু’জনের দিকে সন্দেহের তীর সবচেয়ে বেশি তাদের আজ-কালের মধ্যে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জানা গেছে, এই তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভির হাসান জোহাসহ দেশীয় প্রযুক্তিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারির অর্থ চুরির ঘটনাকে এক মাসেরও বেশি সময় চেপে রাখার পর চিরতরে ধামাচাপা দেওয়ার চক্রান্ত ভেস্তে গেছে।
অর্থ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে এতদিন প্রভাবশালী যে চক্রটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছিল শনিবার থেকে তারা পিছু হটতে শুরু করে। রবিবার র্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢোকার পর ঘটনায় জড়িত দেশীয় অপরাধীরা অনেকটাই চিহ্নিত হয়ে পড়ে। যার রোষাণলটা জোহাকে দিয়ে শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্যরাও চাপে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা।
(এসকে/মার্চ ১৫, ২০১৬)
গত রবিবার রাতে র্যাবের সঙ্গে মিলে রিজার্ভ চুরির তদন্তে তৎপর থাকলেও সোমবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘তানভীর হাসান জোহা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কেউ নয়’।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘সম্প্রতি অনেক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন তানভীর হাসান জোহা নামে জনৈক ব্যক্তি। এতে বিস্মিত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। কারণ ওই ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কেউ নন’।
এতে আরো বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদেনে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি কখনও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন), কখনও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেছেন। তানভীর হাসান জোহা নামের ওই ব্যক্তির কোনো কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের দায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নেই। আলোচিত ওই রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্ত কমিটিও করেনি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ওই ব্যক্তির যে কোনও মন্তব্য তার নিজ দায়িত্বের।’
মন্ত্রণালয়ের এমন বিজ্ঞপ্তির নেপথ্য কারণ অবশ্য ফাঁস করে দিয়েছেন তানভির হাসান জোহা নিজেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ হ্যাকিংয়ের আসল ঘটনা প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ। তারাই এখন বলছেন, আমি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কেউ নই। তারা আমাকে তদন্ত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আমি রবিবার রাতেও র্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কাজে অংশ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি কেউ না হই, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার তদন্তে কীভাবে কাজ করছি? আমাকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কাজে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রবিবার রাতেও র্যাবের তদন্ত দলের সঙ্গে আমি ছিলাম। আমি র্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছি এবং তদন্তে সহায়তা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘রবিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, রিজার্ভের সুইফট কোডের কম্পিউটার আলাদা ছিল না। এটা সাধারণ কম্পিউটারের সঙ্গেই ছিল। এই কম্পিউটারের আলাদা কোন নিরাপত্তা ছিল না।’
জোহা দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশি নাগরিকদের তদন্তে রাখা নিয়ে আপত্তি করেছি। কারণ আমি মনে করে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি হোল (গর্ত) তৈরি করেছে, আর এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাতে তদন্তের নামে তথ্য তুলে দিলে আরও বড় হোল তৈরি হবে। আমি পুরো বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে চাই।’
জানা গেছে, তানভির হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবে কাজ করেন। এটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি নতুন অর্থ বরাদ্দের জন্য দু’মাস ধরে স্থগিত আছে।
সাইবার নিরাপত্তার কাজের সুবাধে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড় বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেন জোহা। এনিয়ে কোথাো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে বিশেষ মহলের রোষাণলে পড়েছেন তিনি।
রবিবারের তদন্তই কাল হলো
রবিবার বিকালে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল ও স্থানীয় আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অর্থ চুরির ঘটনায় তদন্ত করা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট ভারতের নাগরিক রাকেশ আসথানাও উপস্থিত ছিলেন।
দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এ বৈঠকে চৌকস গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপস্থিত কর্মকর্তাদের। তারা অবশ্য অনেক প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় রাকেশ আসথানা আবার দাবি করেন, ঘটনাটি বাইরে থেকে ঘটানো হয়েছে। কিন্তু দেশীয় আইটি এক্সপার্টরা বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই। আর এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সব প্রমাণও তাদের কাছে আছে।
একপর্যায়ে রাকেশ আস্তানা দেশীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের জানান, তার তদন্ত শেষ হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এরপর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
বৈঠকের দেশীয় আইটি এক্সপার্টরা যে তিনটি আইডি শনাক্ত করেছেন সে বিষয়ে প্রযুক্তিগত প্রমাণ তুলে ধরেন রাকেশ আস্তানার কাছে। তারা রাকেশ আস্তানাকে এও বলেন, সন্দেহভাজন পিসিতে ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় এজাতীয় তথ্য পাওয়া গেছে। দেশীয় প্রযুক্তিবিদরা তাকে আগে এ ডিভাইস ব্যবহারের কারণ অনুসন্ধান করতে বলেন।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, ইউএসবির মাধ্যমে পেনড্রাইভ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়। ইউএসবি হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যা স্বল্প সময়ে কম্পিউটার বা ইলেকট্রিক যন্ত্রে সংযোগ করা যায়। এর মাধ্যমে দ্রুত প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা যেমন সম্ভব, তেমনি নতুন কিছু ঢুকিয়ে দেয়াও সহজ।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় ১২ সন্দেহভাজন চিহ্নিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের অধীন ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখা ঘিরে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় আইনশৃংখলা বাহিনীর তদন্ত শুরু হয়েছে।
একজন যুগ্ম পরিচালকের (জেডি) নেতৃত্বে আট কর্মকর্তা এ বিভাগে কাজ করেন। গোয়েন্দাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট যে, ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখার মাধ্যমেই অর্থ কেলেংকারির এই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা ১২ জনের একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে দু’জনকে অতি সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করেছে তদন্তসংশ্লিষ্ট টিম। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে যারা কর্মরত তারা সবাই বিষয়টি জানেন।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, ডিলিং রুম শাখায় দু’জন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা হলেন- জোবায়ের বিন হুদা ও মিজানুর রহমান। এছাড়া উপপরিচালক (ডিডি) পদে রয়েছেন লাকী সুলতানা, আবদুল্লাহ সালেহ ও প্রভাষ চন্দ্র সিংহ এবং সহকারী পরিচালক (এডি) পদে রয়েছেন আলমগীর হোসেন, রফিক আহমেদ মজুমদার ও সনজিৎ রায়। এদের মধ্যে যে দু’জনের দিকে সন্দেহের তীর সবচেয়ে বেশি তাদের আজ-কালের মধ্যে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জানা গেছে, এই তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভির হাসান জোহাসহ দেশীয় প্রযুক্তিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারির অর্থ চুরির ঘটনাকে এক মাসেরও বেশি সময় চেপে রাখার পর চিরতরে ধামাচাপা দেওয়ার চক্রান্ত ভেস্তে গেছে।
অর্থ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে এতদিন প্রভাবশালী যে চক্রটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছিল শনিবার থেকে তারা পিছু হটতে শুরু করে। রবিবার র্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢোকার পর ঘটনায় জড়িত দেশীয় অপরাধীরা অনেকটাই চিহ্নিত হয়ে পড়ে। যার রোষাণলটা জোহাকে দিয়ে শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্যরাও চাপে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা।
(এসকে/মার্চ ১৫, ২০১৬)
Comments
Post a Comment