নিউজ এক্সপ্রেস প্রতিবেদক : জোহার পরিবারের অভিযোগ, বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে তাকে ও তার বন্ধুকে আলাদা গাড়িতে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে আইনি সহায়তা চাইলে তিনটি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় নয় বলে জানিয়ে দেয়।
জোহার শ্যালক মাহমুদ হাসান চৌধুরী বলেন, “বুধবার রাত ১২টার দিকে জোহা তার বন্ধু ইয়ামির আহমেদকে ফোন করে সেনানিবাস এলাকায় যেতে বলেন। এরপর সেনানিবাসের পোস্ট অফিস এলাকায় তারা একটি অটোরিকশায় ওঠেন। সামান্য পথ না এগুতেই অটোরিকশাটি থেমে যায়। চালক জানায়, অটোরিকশায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এরপর চালক নেমে ত্রুটি শনাক্তের চেষ্টা শুরু করলে হঠাৎ দুইটি জিপ গাড়ি এসে অটোরিকশার পাশে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে পাঁচ-ছয়জন লোক জোহা ও ইয়ামিরকে অটোরিকশা থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এবং আলাদা গাড়িতে তুলে নেয়। এর আগে ইয়ামিরের চোখ-মুখ কালো কাপড়ে বেঁধে দেয় তারা। গাড়ি চলতে শুরু করে। আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর গাড়ি থামিয়ে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদূর হাঁটার পর ইয়ামির বুঝতে পারেন সেটি মানিক মিয়া এভিনিউ। তখন তিনি জোহার পরিবারকে ফোন করে বিষয়টি জানান।”
জোহার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার বলেন, “বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে জোহার সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন সে বাসায় ফিরছিল। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাসায় না পৌঁছায় মোবাইল ফোনে আবার কল করি। তখন তার ফোন বন্ধ পাই।”
জোহার পরিবারের সদস্যরা জানান, এ ঘটনার আগের দুই দিন ব্যস্ততার কারণে বাসায় ফেরেননি জোহা। বুধবার রাতে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকার বশির উদ্দিন রোডের বাসায় তার ফেরার কথা ছিল। অপহরণের খবর পেয়ে জোহার পরিবারের সদস্যরো কলাবাগান থানায় যোগাযোগ করলে তারা ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় নয় বলে জানায়। পরে স্বজনরা কাফরুল থানায় যান। কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।”
ডা. কামরুন নাহার বলেন, “জোহা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থেকে দেশের জন্য কাজ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে যখনই কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, তখনই সে তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে।” জোহা যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন, সেজন্য তিনি প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জানান, জোহার সঙ্গে থাকা বন্ধুর নাম ইয়ামির আহমেদ। রাত দেড়টার দিকে ওই বন্ধু তাদের ফোনে জানান, জোহা অপহৃত হয়েছেন। এরপরই তারা কলাবাগান থানায় যান জোহার অপহৃত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করতে। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, যেহেতু তিনি সর্বশেষ কচুক্ষেত এলাকা থেকে কথা বলেছেন, এজন্য কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে জোহার চাচা মাহবুবুল আলম সাধারণ ডায়েরি করতে কাফরুল থানায় যান। কাফরুল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের জানান, এটি ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় পড়েছে। সেখান থেকে ক্যান্টমেন্ট থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ঘটনাস্থল ভাষানটেক থানায় পড়েছে। পরে ওই থানায়ও যোগাযোগ করেন মাহবুবুল আলম। সেখান থেকেও বলা হয় ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় পড়েনি। তার প্রশ্ন, তাহলে ঘটনাস্থল কোথায় পড়েছে? হতাশ হয়ে দুপুরে কলাবাগানের বাসায় ফিরে আসেন মাহবুবুল আলম।
তানভীর জোহাকে তার খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “তদন্ত জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটক করেছে কি-না নিশ্চিত নই। তবে গ্রেফতার করা হয়ে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জোহার অপহরণের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।”
এদিকে এখন পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ দাবি করেনি বলে জানিয়েছে জোহার পরিবার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া তানভীর হাসান জোহা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনসাইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের 'সাইবার নিরাপত্তা' প্রকল্পে কাজ করতেন বলে দাবি করেন। তবে গত সোমবার সরকারের আইসিটি বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তানভীর জোহা বা তানভীর হাসান জোহা নামে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
(এসকে/মার্চ ১৭, ২০১৬)
Comments
Post a Comment