Skip to main content

বাংলাদেশের হবু রাষ্ট্রপতি সুরেন্দ্রকুমার?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজার আজ একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নাম উল্লেখ করেছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরা হল-

পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি আবু সঈদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তা‍ঁকে ঘিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার আবর্তিত। মন্ত্রী ছিলেন সর্বসাকুল্যে ১১ জন। ১৯৭২ এর ১২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত সরকার বেশি দিন দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীতে সংসদীয় রীতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি চালিত সরকার চালু হয়। রাষ্ট্রপতি হন মুজিবুর রহমান। ছ’মাস বাদে ১৫ আগস্ট সেনা আক্রমণে সপরিবারে নিহত হন মুজিব। রাষ্ট্রপতি হন আওয়ামি লিগ নেতা খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। মুজিব-মোস্তাক দু’জনেরই কলেজ জীবন কলকাতায়। মুজিব পড়তেন ইসলামিয়া কলেজে। যার এখনকার নাম মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ। থাকতেন কলেজ হস্টেলে। মোস্তাকের বাস ছিল খিদিরপুরে। বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধে মুজিবের নেতৃত্বে লিগে যোগ দিলেও মোস্তাক ছিলেন মুজিবের শত্রু। মুজিব হত্যায় তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।ছ’মাস পর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে মোস্তাক ক্ষমতাচ্যুত হন।
১৯৭৮-এর ৩ জুন ৭৬.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এপ্রিলে সামরিক আইন প্রত্যাহার। ১৯৮১র ৩১ মে চট্টগ্রামে সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত। মেজর জেনারেল মঞ্জুর রাষ্ট্রপতি। ১৫ নভেম্বর নির্বাচনে জিতে রাষ্ট্রপতি হলেন বিএনপি প্রার্থী এমএ সাত্তার। ১৯৮২র ২৪ মার্চ সেনা প্রধান লেফটেন্যানাট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন।

১৯৯০-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমেদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেন এরশাদ।১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি হন সাহাবউদ্দিন। ২০০৮-এ দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নিয়েই যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তিনি তৎপর। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী। ২০১৫র ১৭ জানুয়ারি হিন্দু আইনজীবী সুরেন্দ্রকুমার সিনহাকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন। এতে ক্ষোভ আওয়ামি লিগের মধ্যেও। বিক্ষুব্ধরা জানে, পদটি কতটা শক্তিশালী। প্রধান বিচারপতির অবস্থান রাষ্ট্রপতির ঠিক এক ধাপ নিচে। পিতা মুজিবের মতই প্রধান বিচারপতিকেই রাষ্ট্রপতি করাটা পছন্দ করেন হাসিনা। এতে সুবিধে দু’দিকে। এক, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। দুই, একজন আইনজ্ঞকে অভিভাবক হিসেবে পাওয়া। ভারতে প্রথম সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন মহম্মদ হিদায়তুল্লা ১৯৬৯-এ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

হাসিনা সুরেন্দ্রকুমারকে টেনে তুললেন কেন। আইনজীবী বা বিচারপতিদের মধ্যে আওয়ামি লিগের সমর্থক কম নেই। অন্য কাউকেও পছন্দ করতে পারতেন। তা না করে সংখ্যালঘু বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিলেন। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে সংখ্যালঘু মাত্র আট শতাংশ। মৌলবাদ ডানা মেলায় তারা বড় অসহায়। বিশেষ করে দেশত্যাগী হিন্দুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলায় তাদের ভিড়। মৌলবাদীরা সেটাই চায়। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোই তাদের উদ্দেশ্য। হাসিনা প্রতিবাদী। তিনি একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির ব্যবস্থা করে কঠিন বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পথেই টেনে নিয়ে যেতে চান। সামনের সব বাধাই তাঁর কাছে তুচ্ছ। হাসিনার আগ্রহেই ২০১৩র ২০ মার্চ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন সংসদের অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। তার ন’মাস পর সাধারণ নির্বাচন জিতে ফের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবার সাধারণ নির্বাচন ২০১৯’এ। তার আগেই বর্তমান রাষ্ট্রপতি হামিদের মেয়াদ ফুরনোর কথা। সেই শূন্য আসনে সুরেন্দ্রকুমারকে বসানোর সুযোগ ছাড়বেন কেন হাসিনা। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার সুযোগ তার সামনে। সুরেন্দ্রকুমারও সেই ইঙ্গিত পেয়েছেন। তার জোরেই রাষ্ট্রীয় গরিমা প্রকাশে তিনি ব্যস্ত। সিলেটের সভায় তিনি বলেছেন, আমেরিকার ডলার যার গণতন্ত্র তার। বাংলাদেশে তা নয়। এখানে সবাই সমান।

(এসকে/মার্চ ২৫, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স