Skip to main content

‘বাংলাদেশের একটি অংশের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা'




নিউজ এক্সপ্রেস : ঠিক এ কথাটাই লিখেছেন এক আইনজীবী৷ সুন্দরবনের কাছে রামপালে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির চুক্তি স্বাক্ষরের পর এ কথা লিখেছেন তিনি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো অনেকে জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া৷

পরিবেশবাদীদের আপত্তির মুখেই গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি পাঁচতারকা হোটেলে ভারতের হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন-ইপিসি (টার্নকি) চুক্তি করেছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)৷

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে যা ব্যয় করে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব হবে৷

বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক টুইটে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে এক ‘মাইলফলক' বলা হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ পরিবেশবাদী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের অণেকেই মনে করছেন, এই কেন্দ্র বিশ্বের অন্যতম বড় ম্যানগ্রোগ ফরেস্ট সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে৷

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে৷ এর ফলে সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ ও পশুপাখির প্রাণ বিপন্ন হতে পারে৷ এছাড়া তেল সরানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া গেলে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসমূলীয় বন ও বনের পশুপাখির জীবনে বিপর্যয় বয়ে আসতে পারে৷ অথচ নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান দাবি করেছেন যে, তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না৷

অ্যাক্টিভিস্ট এবং আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ফেসবুকে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘১২ই জুলাই বাংলাদেশের একটি অংশের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হলো৷ সুন্দরবন মরলে বাংলাদেশ বাঁচার কোনো উপায় নেই৷ এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা৷ সরকারদ্রোহিতাকে আইনের প্যাঁচে ফেলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বানিয়ে দিয়েছে৷''

তিনি লিখেছেন, ‘‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুধু ব্যক্তি নয়, সরকারও দ্রোহ করতে পারে৷ রামপাল চুক্তি একটি মৃত্যু সনদ ছাড়া আর কিছুই নয়৷''

অ্যাক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ ফেসবুকে এক বিস্তারিত পোস্টে লিখেছেন, ‘‘বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন- রামপাল কয়লাবিদ্যুত প্রকল্পের বিরোধিতাকারীরা সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ সম্ভবত খনিজ কয়লা দিয়ে পানি পরিষ্কারের যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন, তার অভ্রান্ততা প্রমাণ করতেই তিনি এ কথা বলেছেন৷ কারণ, পানি পরিষ্কার থিওরির কোনো কাউন্টার থিওরি বিরোধীরা দিতে পারেনি৷ পারা সম্ভবও ছিল না৷''

তিনি লিখেছেন, ‘‘ঘটনা হচ্ছে, এইসব ধুরন্ধর শয়তানেরা নিজের বা নিজের সন্তানদের ভবিষ্যত বাসযোগ্য জায়গা হিসেবে বাংলাদেশকে অনেক আগেই বাতিল করে দিয়েছেন৷ এখন যত বেশি কামিয়ে নিতে পারেন, ততই সুবিধা৷ আর তাই জাতীয় স্বার্থ প্রশ্নে যৌক্তিক আলাপের ভাষা কথনোই তাদের বোধগম্য করা সম্ভব না৷ আপনি যতই তথ্য প্রমাণ দেন না কেন, তারা বলবে তালগাছ আমার ...৷ কয়লা দিয়ে পানি পরিষ্কার করে বিজ্ঞানের চৌদ্দগুষ্ঠির কন্ট্রোল নিয়া নিছি৷ এখন প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হলো৷''

বাকি বিল্লাহ আরো লিখেছেন, ‘‘সংগ্রাম জারি রাখতে হবে৷ প্রকল্প এলাকার শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধী৷'' সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর ফেসবুকে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘...আচ্ছা, রামপাল না পরিবেশ ছাড়পত্র পায়নি? তাহলে চুক্তি হয় কী করে? গায়ের জোরে করিয়েই ছাড়লো?'' তথ্যসূত্র: ডয়েচেভেলে।

(এসকে/জুলাই ১৬, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স