Skip to main content

গাদ্দাফি-পুত্রের ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণিত হলো

 
 
 
নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : লিবিয়ার নিহত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণীই শেষে সত্যি হলো। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যখন দানা বেঁধে উঠছে, ওই সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সাইফ যেসব আশঙ্কার কথা বলে দেশবাসীকে সতর্ক করেছিলেন, সেসব বেশির ভাগই এখন দৃশ্যমান।

সে বছর ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দেওয়া ভাষণে সাইফ যা বলেন, তা ছিল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অরাজক পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে না দেওয়ার অনুরোধ। ওই সময় সাইফ দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বিদ্রোহ সব ধূলিসাৎ করবে। দেশকে ঠেলে দেবে গৃহযুদ্ধের দিকে। জাতি ও গোষ্ঠীগত বিরোধ দেশকে টুকরো করে ফেলবে। ফায়দা লুটবে বাইরের দুর্বৃত্ত ও পশ্চিমারা। প্রাণ ঝরবে হাজারো মানুষের।

গাদ্দাফির এই ছেলে বলেন, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের মানুষের নিরাপত্তার অভাব দেখা দেবে। অর্থনৈতিক শক্তির মূল ভিত্তি তেল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। বিপর্যস্ত হবে অর্থনীতি। এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে ধর্মান্ধ সংগঠন ও গোষ্ঠীগুলো। পুরোপুরি না হলেও দেশের কিছু এলাকা তারা দখল করে নেবে।

সাইফ আল ইসলাম ওই সময় হুঁশিয়ার করেছিলেন, দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, এর জের ধরে বহু লিবীয় বাস্তুভিটা হারাবে। আশ্রয়ের আশায় যাযাবরের মতো তারা ভিন দেশের দ্বারে দ্বারে ঘুরবে।

শতবর্ষ আগের দুঃসময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাইফ বলেছিলেন, ১৯১১ সালে ইতালি তাদের দেশ দখল করে নেওয়ার পর যে ভয়ানক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, সেই সংকটাপন্ন দিনগুলো ফিরে আসবে। ওই সময় লিবিয়ার হাজারো মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল।

প্রায় ৪০ মিনিটের এই ভাষণে সাইফ সতর্ক করেন, দেশে অরাজকতা দেখা দিলে তাদের মূল সম্পদ প্রাকৃতিক তেল অন্যদের হাতে পড়বে, বিপুল পরিমাণ তেল পুড়ে নষ্ট হবে। বারোটা বেজে যাবে দেশের অর্থনীতির।

সাইফের ওই ভাষণ সে সময় সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তার এই সতর্কবার্তা বেশির ভাগ মানুষ আমলে নেয়নি। আন্দোলনরত মানুষ উল্টো ক্ষুব্ধ হয়েছে।

বিশ্লেষক ও সমালোচকেরা কঠোর ভাষায় সাইফের নিন্দা করেছেন। তারা বলেছেন, গণতন্ত্র পেলে লিবিয়া বরং উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে ফুলেফেঁপে উঠবে।

এরপর অনেক কিছুই ঘটে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সহযোগিতায় বিদ্রোহীরা গাদ্দাফির পতন ঘটিয়েছে। বন্দী হয়েছেন সাইফ আল ইসলাম। গত বছর লিবিয়ার আদালত যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাইফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এ বছর এপ্রিলে তিনি এ দায় থেকে খালাস পান বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) খাঁড়া এখনো তার ঘাড়ের ওপর ঝুলছে।

সাইফের ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন, পাঁচ বছর আগে তিনি যেসব কথা বলেছেন, তা কিন্তু ফলেছে। গাদ্দাফির আট সন্তানের মধ্যে বাবার কাছে তার বিশেষ মূল্য ছিল। ৪৪ বছরের সাইফ লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস থেকে পিএইচডি করেছেন। সেখানে কিছু গুণী ব্যক্তির সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে তার। কাজেই তিনি ২০১১ সালে যে ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, সেটা যে স্রেফ মনগড়া বা হুজুগে বিষয় ছিল না।

লিবিয়ায় এখন জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও আঞ্চলিক প্রশাসনে এর নিয়ন্ত্রণ নেই। ত্রিপোলি ও তবরুকের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরের প্রশাসকেরা এই সরকারকে থোড়াই কেয়ার করেন।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে যে লিবিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ১৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদিত হতো, সেখানে এখন তেল উৎপাদন চার-পাঁচ লাখ ব্যারেল।

তেলক্ষেত্রগুলোতে প্রায়ই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গি ও মিলিশিয়ারা। ২০১১ সাল থেকে বিদ্যুৎ-সংকট লিবিয়ার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। জাতিগোষ্ঠী ও মিলিশিয়াদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও সংঘর্ষ এর মধ্যে দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। এগুলো হচ্ছে ত্রিপোলিতানিয়া, সাইরেনাইকা ও ফেজান। প্রায়ই সেখানে বিদেশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আল-কায়েদা এবং সিরতে ও সাবরাদায় আইএসের দৌরাত্ম্য চলছে। অস্ত্র এখন হাতে হাতে।

সালেহ জাওয়িদা নামের একজন আইনপ্রণেতার তথ্যমতে, ৬৪ লাখ লোকের দেশটিতে প্রায় দুই কোটি অস্ত্র রয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাজি বারাকা সংবাদমাধ্যমে জানান, লিবিয়ায় ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার লোক। অভাব-অনটন দেশজুড়ে। দুর্নীতি ও অনাচারে ভরে গেছে দেশ। উন্নত জীবনের আশায় মানুষ দূরদেশের দিকে ছুটছে। অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকের ঘটছে সলিলসমাধি।

গাদ্দাফি একনায়ক ছিলেন, এটা ঠিক। তবে লিবিয়ার মতো দেশ, যেখানে বহু দল, বহু গোষ্ঠী আর বহু মতের জটাজাল, সেখানে শক্তভাবে হাল ধরাও কঠিন। গাদ্দাফির সময় দেশে গণতন্ত্র ছিল না ঠিকই, কিন্তু এমন ডামাডোল ছিল না। এখানে লক্ষণীয়, সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নিয়ে গাদ্দাফির পতন ঘটানো হয়নি। আর গাদ্দাফির পর সুখী দেশ গড়ার স্বপ্ন যারা পেছন থেকে দেখিয়েছিল, এই পরদেশি মিত্ররা সটকে পড়েছে। মাঝখান থেকে নিরীহ সাধারণ মানুষের যত দুর্ভোগ। এর শেষ কোথায়, এরও কোনো আভাস নেই।

কেবল লিবিয়াই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে গণতন্ত্রের সুবাস নিয়ে আরব বসন্তের ফুল ফুটেছিল, সে ফুল ঝরে পাপড়ি শুকিয়ে গেছে। তবে এই ফুল এটাই শিক্ষা দিয়েছে যে সমঝোতার মনোভাব না থাকলে, সত্যিকারের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে, কোনো দেশেই শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে না। আর এতে যদি বহিরাগতরা নাক গলায়, মতলব নিয়ে তৎপরতা চালায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও বেশি ঘোলাটে হয়ে যায়।

(এসকে/জুলাই ৩০, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

Never promoted terror, says Naik

News Express Desk : Accused of giving hate speeches, inciting acts of terror and disrespecting other religions, Dr. Naik said he had a right to express his view, given to him by the Constitution. He said he believed his religion was the best because, “the Koran says it. No other religious text or scripture claims this fact.” About inciting acts of terror, he challenged the media “to find out any instance where I have promoted terrorism or praised an act of terrorism.” In one of the clips floated on social media, Dr. Naik is seen supporting Al-Qaeda founder Osama bin Laden. He claimed that this clip was doctored and being used out of context. He said he was “neither a saint, nor a terrorist for me.” Preacher Zakir Naik on Friday at a small banquet hall in Mazgaon, addressed media persons via Skype: “My statements were taken out of context; they were half sentences, and were doctored. I am a messenger of peace. It is condemnable for any human, whether Muslim or non-Muslim, to attac...

এখনো চলছে রোহিঙ্গা নিধন

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি ২৫ আগস্টের আগে থেকেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করলেও এখন নিধনযজ্ঞ থামেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এরআরডব্লিউ। সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার আলামত পেয়েছেন তারা। স্থানীয় সময় গত রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫৪টি গ্রাম। এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের পর সংস্থাটি জানায়, ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়া...

ফিলিস্তিনের ‘স্পাইডারম্যান’

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ১২ বছরের এক শিশুর কাজকারবারও এইটুকুন হওয়ার কথা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পুঁচকে বালক মোহাম্মদ আল শেখের কাজকারবার দেখে ভিরমি লেগে যাবে অনেকের। এই বয়সেই ও নিজের শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে নানা কসরত দেখাতে পারে। তাক লাগানোর মতো সেসব কসরত। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার চার ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের মোহাম্মদ আল শেখ অসম্ভব সব শারীরিক কসরত দেখাতে পারে। নিজের পায়ের পাতা উল্টো দিক দ িয়ে নিয়ে এসে কাঁধের ওপর নিতে পারে সে। নিজের শরীরকে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দিতে পারে। এ ছাড়া উঠের পিঠে উঠে ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো লাফাতেও পারে সে। আর এ কারণে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যাও দিয়েছে। ওই এলাকায় এখন সে তারকা। তবে এই তারকাখ্যাতি পেয়ে ক্ষান্ত নয় মোহাম্মদ, এখন সবাইকে তাক লাগানো শারীরিক কসরত দেখিয়ে নিজের নামটি সে লিখে নিতে চায় গিনেস বুকের পাতায়। ২০১৪ সালে হাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়। এ সময় প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে মোহাম্মদের। এই যুদ্ধাবস্থার মাঝেও লেব...