ভূতেরা কারখানার ভিতরে। আর সাত হাজার কর্মচারী বাইরে অপেক্ষায়। গেটে তালা। গত রোববার এই ঘটনা ঢাকার আশুলিয়া ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানায়। একদিন আগে একজন শ্রমিক বাথরুমে ভূত দেখে মূর্ছা যান, এরপরে অসুস্থ হন আরও অনেকে। এর রেশ গতকালও ছিল। তবে মালিকপক্ষ বলছেন কারখানাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পুরোটাই কারও কারসাজি। ভূত বলে কিছুই নেই। শ্রমিকরা তা মানতে নারাজ।
জানা গেছে, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানায় ‘ভূত আতঙ্ক’র পরদিন গতকালও আতঙ্ক বিরাজ করেছে। ভয়ে কারখানা খোলা হয়নি। গতকাল সরেজমিন ওই কারখানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করায় কোনো কাজও হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতালে গিয়ে কারখানার কোনো কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। সাভার উপজেলার সরকারি হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, “সকালে হাসপাতালে পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন পানি ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে মহাখালী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়েছেন—তা সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।”
এদিকে কারখানার শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে কারখানার সামনে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আশুলিয়ার থানা সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
ডেকো ডিজাইন কারখানার উৎপাদক ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, “খাবার পানি খাওয়ার পর থেকেই কারখানার বেশকিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কী কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন—সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অসুস্থ শ্রমিকদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) হারুন-অর-রশীদ গতকাল জানান, হাসপাতালে ৬৩ জন শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬৩ জন সন্ধ্যার মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান। অসুস্থ শ্রমিকদের প্রায় সবাই হাত-পা, পেটে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব অনুভব করেন। অনেকে শরীর ঝিমঝিম করার কথাও বলেন। তবে শ্রমিকদের অসুস্থ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হারুন-অর-রশীদ সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
এদিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কৌশিক বাশার বলেন, “শনিবার দুপুরের পর থেকে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, তারা অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে অনেকেই মানসিক কারণেও অসুস্থ হন।” তিনি আরও বলেন, “পেটব্যথা, বমি, মাথা ঘুরে পড়া ও খিঁচুনি রোগ থাকার কারণেও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।”
(এসকে/আগস্ট ২৯, ২০১৬)
Comments
Post a Comment