Skip to main content

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের সতর্কতা




নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ‘গাছাড়া’ ভাব বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রা’দ আল হুসেন। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চিকে বিরোধপূর্ণ উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনের আহ্বান জানানোর সপ্তাহখানেক পর এক সতর্কবার্তায় হাই কমিশনার এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।

গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর থেকে সহিংসতায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। সহিংসতা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শতাধিক মারা যাওয়ার পর এ দফাই এত বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশ সীমান্ত পানে ছুটছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

এবারের সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার তা অস্বীকার করেছে।

বিরোধপূর্ণ ওই এলাকায় বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, যা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান জেইদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার যদি সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘হালকা, নিষ্ফল বা গাছাড়া’ ভাব নিয়ে দেখে তাহলে তা ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

জেইদ বলেন, “রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও জালিয়াতি অ্যাখ্যা দিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের আবেদন ধারাবাহিক খারিজ করা হচ্ছে, যা নির্যাতিতদের জন্য অপমানস্বরূপ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চল পরিদর্শনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের আবেদন ‘এখনও গৃহীত না হওয়ায়’ তীব্র হতাশাও ব্যক্ত করেন হাইকমিশনার, “কর্তৃপক্ষের যদি লুকানোর কিছু না থাকে, তাহলে কেন তারা সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছে? বারবার আমাদের অনুমতি দিতে ব্যর্থতায় আমাদের শঙ্কা, সেখানে ভয়াবহ কিছু হতে পারে।”

বিরোধপূর্ণ উত্তর রাখাইনে শান্তি ফেরাতে দেশটির সরকারকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভ নিরসনে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ জানান তিনি, “মিয়ানমার উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি যেভাবে সামলাচ্ছে তা খারাপ পরিস্থিতিকে কী করে নিকৃষ্ট অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায় তার একটি উদাহরণ হতে পারে। আমি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে পেছনে ফিরে দীর্ঘদিন ধরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে ওই অঞ্চলে চালানো নিরাপত্তা অভিযানের প্রভাব বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি।”

বিবৃতিতে অক্টোবরে সীমান্ত পোস্টে এবং পরে গত ১২ নভেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলারও তীব্র নিন্দা জানান জেইদ, “এগুলো কঠিন অপরাধ; এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পরিকল্পনাকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। কিন্তু যতদূর শুনেছি, ওই অপরাধের জন্য নিরাপত্তাবাহিনী পুরো সম্প্রদায়কে শাস্তি দিচ্ছে। তাদের প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা, এবং মাত্র দুই মাসের মধ্যে কম করে হলেও ২৭ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশের সীমান্ত অভিমুখে পালিয়ে গেছে।”

নিরাপত্তা বাহিনীর এমন মনোভাবকে ‘ভুল’ বলেও অ্যাখ্যা দেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান, “দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, দুনিয়ায় এখন এমন অসংখ্য উদাহরণ বিদ্যমান যেখানে- সমস্যার মূল না খুঁজে নিরাপত্তার নামে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার চলছে। ফল হয়েছে ভয়ানক, অনেকেই বাস্তুহারা হয়েছেন, বিকাশ ঘটেছে সহিংস জঙ্গিবাদের। এবং শেষ পর্যন্ত সবাই পরাজিত হয়েছি।”

শান্তি ফেরাতে মিয়ানমারের রাজনীতিক ও সামরিক নেতারা এক হয়ে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটির সম্প্রদায়গুলোকে আশ্বস্ত করার কর্মসূচি নিতে পারে বলেও পরামর্শ দেন জেইদ, “ক্ষোভের কথা শুনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে তা মেটাতে কাজ করতে হবে; যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মিলবে সেখানে নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করে দুষ্কৃতিকারীদের- তারা যেই হোক না কেন, বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

মিয়ানমার সরকারকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় প্রস্তুত আছে বলেও জানান হাইকমিশনার। পরিস্থিতির উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের তদন্ত কমিশন গঠন করার কথা উল্লেখ করে জেইদ নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষদের শর্তহীনভাবে বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চল পরিদর্শনে অনুমতি দেয়ার ওপর জোর দেন।

তিনি বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে পড়া রাখাইন সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিতে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানান, “মিয়ানমার সরকারকে বিপজ্জনক ও অসহনীয় রাখাইন সঙ্কট, যা এরই মধ্যে বিস্তৃত হয়ে অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।”

(এসকে/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স