Skip to main content

ওরাল সেক্সে ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া




নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : শারীরিক সংসর্গের সময় ওরাল সেক্স (যৌনক্রিয়ার ক্ষেত্রে মৌখিক স্পর্শ বা মুখমেহন) করলে ভয়ংকর মাত্রায় গনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর সাম্প্রতিক সময়ে জন্মনিরোধক (কনডম) ব্যবহারে অনীহা বাড়ায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডব্লিউএইচও সতর্ক করেছে, এভাবে যদি কারো গনোরিয়া রোগটি হয়ে যায়, তাহলে এ সময়ে তা নিরাময় করা অনেক কঠিন। কিছু ক্ষেত্রে তা অসম্ভবও বটে।

ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনতার মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগের সংক্রমণ শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগ নিরাময়ে কার্যকরী নতুন ওষুধ খুব বেশি নেই। এ কারণে বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ মানুষ যৌনতার মাধ্যমে সংক্রমণজনিত এ রোগে আক্রান্ত হয়। আর এর কারণে কেউ বন্ধ্যাও হয়ে যেতে পারে।

৭৭টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও বলছে, গনোরিয়া ভয়াবহভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ থিওডোরা উয়ি বলেন, জাপান, ফ্রান্স ও স্পেনে কমপক্ষে তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে গনোরিয়া রোগটি পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়।

থিওডোরা উয়ি বলেন, “গনোরিয়ার জীবাণু খুবই স্মার্ট। এর চিকিৎসায় যতবার নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন, ততবারই তা ওই অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে। আরও চিন্তার বিষয় হলো, এই রোগটি দরিদ্র দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। সেখানে এই রোগের জীবাণু ওষুধকে কতটা প্রতিরোধ করতে পারে, তা জানাটা দুরূহ।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, গনোরিয়ার জীবাণু যৌনাঙ্গ, মলদ্বার এবং গলার ভেতরে সংক্রমণ ঘটায়। এ প্রসঙ্গে থিওডোরা উয়ি বলেন, “যখন সাধারণ গলার সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন, তখন তা নেইসেরিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়। আর এ কারণেই ওই ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। আর ওরাল সেক্সের মাধ্যমে হওয়া গনোরিয়ার ব্যাকটেরিয়া যদি একই ধরনের পরিবেশ পায়, তাহলে তা ‘সুপার গনোরিয়া’ তৈরি করতে পারে।”

থিওডোরা উয়ি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী পুরুষদের মধ্যে ফারিনজেল সংক্রমণের মাধ্যমে গনোরিয়া জীবাণু ক্রমশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। আর জন্মনিরোধক ব্যবহার না করার কারণে এইচআইভি/এইডসসহ এ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, নেইসেরিয়া গনোরিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেই মানুষের এই গনোরিয়া রোগটি হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক যৌনতা, ওরাল সেক্স ও পায়ুকামের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগ হলে যৌনাঙ্গ থেকে সবুজ বা হলুদাভ পুঁজের মতো বের হতে পারে, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে প্রায় একজন ও তিন-চতুর্থাংশ নারীদের এবং সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের লক্ষণ সহজে শনাক্ত করা যায় না। এ রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে বন্ধ্যত্ব হয়ে যেতে পারে। আর গর্ভাবস্থায় এ রোগের সংক্রমণ হলে তা শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ডব্লিউএইচও বলছে, গনোরিয়ার বিপজ্জনক মাত্রা প্রতিরোধে প্রতিটি দেশে পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং নতুন ওষুধ তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

দ্য গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের সদস্য মনিকা বালাসেগারাম বলেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ। এত ওষুধের মধ্যে মাত্র তিনটি ওষুধ গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলো আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

ডব্লিউএইচও বলছে, গনোরিয়া রোগ ঠেকাতে যেকোনোভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করতেই হবে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক রিচার্ড স্ট্যাবলার বলেন, “গনোরিয়ার জীবাণু এতটাই শক্তিশালী যে গত ১৫ বছরে তিন দফা চিকিৎসাপদ্ধতি বদলাতে হয়েছে। এখন যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই শেষ পদ্ধতি। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই পদ্ধতিও বিফল হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বে এখন ওরাল সেক্স করার হার বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ-তরুণীদের কাছে এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় যুক্তরাজ্যের প্রথম ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিটিউডস অ্যান্ড লাইফস্টাইলসে (১৯৯০-৯১) বলা হয়েছে, দেশটির ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ ও ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ নারী শারীরিক সংসর্গের সময় সঙ্গীদের সঙ্গে ওরাল সেক্স করেন।

যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয়বার করা ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিটিউডস অ্যান্ড লাইফস্টাইলসে (১৯৯৯-২০০১) বলা হয়েছে, দেশে ওরাল সেক্স করা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছ। ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ ও ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী শারীরিক সংসর্গের সময় সঙ্গীদের সঙ্গে ওরাল সেক্স করেন।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সার্ভেতে দেখানো হয়েছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারী-পুরুষদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ওরাল সেক্সে অভ্যস্ত।

(এসকে/জুলাই ০৮, ২০১৭)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স