Skip to main content

মনির মতো এগিয়ে আসুক সবাই

শাহনেওয়াজ খান



সড়কে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে প্রায় ক্ষেত্রেই অনেক যাত্রীকে দূরে সরে যেতে দেখা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী রাহিমা মনি (২৫)। গত মঙ্গলবার বাসে চড়ে ঢাকায় আসছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কাজীবাড়ি গ্রামের মোশারফ হোসেনের এই মেয়ে। ওই বাসেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাত বিচ্ছিন্ন হয় বাসশ্রমিক খালিদ হাসান হৃদয়ের (৩০)। এরপর তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন মনি।

দুর্ঘটনার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনা পর্যন্তই নয়; নিয়মিত রোগীকে দেখতে যাচ্ছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়া এই শিক্ষার্থী থাকেন অগ্রণী কলোনিতে সিট ভাড়া করে। সেখান থেকেই নিয়মিত ঢামেকে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতা ও উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন তার স্বামী। মহানুভব এই ছাত্রীকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হৃদয়ের বাবা রবিউল হোসেন। তবে তাও যেন তার কাছে কম হয়ে যাচ্ছে।

হাত হারানো গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হৃদয়ও বারবার বলছেন মনির কথা। যার সাহসিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দ্রুত হাসপাতালে যেতে পেরেছিলেন হৃদয়। শুধু তাই নয়, জুগিয়েছেন মানসিক শক্তিও। তবে এসব ব্যাপার নিয়ে একদমই ভাবছেন না রাহিমা মনি। তার ভাবনায় শুধু- রোগীর সুস্থ হওয়া। আর মহানুভবতা? এক্ষেত্রে অবশ্য যথেষ্ট বিনয়ী স্নাতকের এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি একা নই। এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে সবাই। আশেপাশের লোকজন, চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সবাই এগিয়ে এসেছেন। এমনকি রক্তও দিয়েছেন বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীও (হিন্দু) রয়েছেন।’

দুর্ঘটনার পর হৃদয়কে উদ্ধারে একাই এগিয়ে গেছেন মনি। এমনকি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে যখন হৃদয়ের জন্য জরুরি রক্ত প্রয়োজন তখনও একাই চিৎকার জুড়েছেন। যাতে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন। এরপর হৃদয়কে ঢামেকে আনা, ভর্তি, নিয়মিত দেখাশোনা সব কিছুই করে গেছেন করিৎকর্মা এই নারী। শুধু তাই নয়, যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে হাজারো লোককে দেখিয়েছেন কিভাবে অন্যের দুরবস্থায় এগিয়ে আসতে হয়।

এক আত্মীয়ের মৃত্যুতে বাড়িতে যাওয়ার পর কলেজের ফরম ফিলাপের উদ্দেশ্যে গত মঙ্গলবার ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন মনি। ওই গাড়িতেই পেছনের ছিটে বসে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন একই এক্সপ্রেসের অন্য বাসের হেলপার হৃদয়। তাদের বাসটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক বাসকে অতিক্রম করার সময় বাসের পেছনের অংশে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডান হাত বাহু থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে যায় হৃদয়ের।

ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নেন মনি। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢামেকে এনে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করেন। বর্তমানে ঢামেকের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন তিনি। শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত, দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি জয় হচ্ছে মনিদের মানবিক তৎপরতারও।

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স