Skip to main content

রোজার সময় শরীরে যা ঘটে







নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: প্রতি বছর কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখেন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে।

গত কয়েক বছর ধরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে রোজা পড়েছে গ্রীষ্মকালে। ফলে এসব দেশের মুসলিমদের রোজা রাখতে হচ্ছে গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে। যেমন ধরা যাক নরওয়ের কথা। সেখানে এবছর মুসলিমদের প্রায় ২০ ঘন্টা সময় ধরে রোজা রাখতে হবে। এই একমাস ধরে রোজা রাখায় শরীরে কী প্রভাব ফেলে? 

প্রথম কয়েকদিন: সবচেয়ে কষ্টকর 

শেষ বার খাবার খাওয়ার পর ৮ ঘন্টা পার না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু মানুষের শরীরে সেই অর্থে উপোস বা রোজার প্রভাব পড়ে না। আমরা যে খাবার খাই, পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে অন্তত ৮ ঘন্টা সময় নেয় শরীর।

যখন এই খাদ্য পুরোপুরি হজম হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশীতে সঞ্চিত থাকে যে গ্লুকোজ, সেটা থেকে শক্তি নেওয়ার চেষ্টা করে। শরীর যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে, তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

তবে যেহেতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে যায়, সে কারণে হয়তো কিছুটা দুর্বল এবং ঝিমুনির ভাব আসতে পারে। এছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।

রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কারণ এটি শরীরে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এ সময়টাতেই আসলে শরীরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগে। 

৩ হতে ৭ রোজা: পানিশূন্যতা থেকে সাবধান 

প্রথম কয়েকদিনের পর আপনার শরীর যখন রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, তখন শরীরে চর্বি গলে গিয়ে তা রক্তের শর্করায় পরিণত হচ্ছে। কিন্তু রোজার সময় দিনের বেলায় যেহেতু আপনি কিছুই খেতে বা পান করতে পারছেন না, তাই রোজা ভাঙ্গার পর অবশ্যই আপনাকে সেটার ঘাটতি পূরণের জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। নইলে আপনি মারাত্মক পানি-শূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে গরমের দিনে যদি শরীরে ঘাম হয়।

আর যে খাবার আপনি খাবেন, সেটাতেও যথেষ্ট শক্তিদায়ক খাবার থাকতে হবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং চর্বি।

একটা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সব ধরণের পুষ্টি, প্রোটিন বা আমিষ, লবণ এবং পানি থাকবে।

৮ হতে ১৫ রোজা: অভ্যস্ত হয়ে উঠছে শরীর

এই পর্যায়ে এসে আপনি নিশ্চয়ই অনুভব করতে পারছেন যে আপনার শরীর-মন ভালো লাগছে, কারণ রোজার সঙ্গে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করেছে।

ক্যামব্রিজের এডেনব্রুকস হাসপাতালের ‘অ্যানেসথেসিয়া এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের’ কনসালট্যান্ট ড. রাজিন মাহরুফ বলেন, এর অন্যান্য সুফলও আছে।

“সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই এবং এর ফলে আমাদের শরীর অন্য অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারে না, যেমন ধরুণ শরীর নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে।”

“কিন্তু রোজার সময় যেহেতু আমরা উপোস থাকছি, তাই শরীর তখন অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। কাজেই রোজা কিন্তু শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এটি শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।”

১৬ হতে ৩০ রোজা: ভারমুক্ত শরীর

রমজান মাসের দ্বিতীয়ার্ধে আপনার শরীর কিন্তু পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নেবে। আপনার শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এখন এক ধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। সেখানে থেকে সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে আপনার শরীর যেন শুদ্ধ হয়ে উঠবে।

“এসময় আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পাবে। আপনার স্মৃতি এবং মনোযোগের উন্নতি হবে এবং আপনি যেন শরীরে অনেক শক্তি পাবেন", বলছেন ড. মাহরুফ।

“শরীরের শক্তি জোগানোর জন্য আপনার আমিষের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। যখন আপনার শরীর ‘ক্ষুধার্ত’ থাকছে তখন এটি শক্তির জন্য দেহের মাংসপেশীকে ব্যবহার করছে। এটি ঘটে যখন একটানা বহুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনি উপোস থাকছেন বা রোজা রাখছেন।”

“যেহেতু রোজার সময় কেবল দিনের বেলাতেই আপনাকে না খেয়ে থাকতে হয়, তাই আমাদের শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার এবং তরল বা পানীয় গ্রহণের সুযোগ থাকছে রোজা ভাঙ্গার পর। এটি আমাদের মাংসপেশীকে রক্ষা করছে এবং একই সঙ্গে আমাদের আবার ওজন কমাতেও সাহায্য করছে।”

তাহলে রোজা রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

ড. মাহরুফ বলেন, অবশ্যই, তবে একটা ব্যাপার আছে। “রোজা রাখা শরীরের জন্য ভালো কারণ আমরা কী খাই এবং কখন খাই সেটার ওপর আমাদের মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। কিন্তু একমাসের রোজা রাখা হয়তো ভালো। কিন্তু একটানা রোজা রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাবে না।”

“শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটানা রোজা রাখা কোন উপায় হতে পারে না। কারণ একটা সময় আপনার শরীর চর্বি গলিয়ে তা শক্তিতে পরিণত করার কাজ বন্ধ করে দেবে। তখন এটি শক্তির জন্য নির্ভর করবে মাংসপেশীর ওপর। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কারণ আপনার শরীর তখন ক্ষুধায় ভুগবে।”

ড. মাহরুফের পরামর্শ হচ্ছে রমজান মাসের পর মাঝে মধ্যে অন্যধরণের উপোস করা যেতে পারে। যেমন ৫:২ ডায়েট (পাঁচদিন কম খেয়ে দুদিন ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করা)। যেখানে কয়েকদিন রোজা রেখে আবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাওয়া-দাওয়া করা যেতে পারে। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।

(এসকে/মে ১৬, ২০১৮)

Comments

Popular posts from this blog

এখনো চলছে রোহিঙ্গা নিধন

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি ২৫ আগস্টের আগে থেকেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করলেও এখন নিধনযজ্ঞ থামেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এরআরডব্লিউ। সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার আলামত পেয়েছেন তারা। স্থানীয় সময় গত রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫৪টি গ্রাম। এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের পর সংস্থাটি জানায়, ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়া...

Never promoted terror, says Naik

News Express Desk : Accused of giving hate speeches, inciting acts of terror and disrespecting other religions, Dr. Naik said he had a right to express his view, given to him by the Constitution. He said he believed his religion was the best because, “the Koran says it. No other religious text or scripture claims this fact.” About inciting acts of terror, he challenged the media “to find out any instance where I have promoted terrorism or praised an act of terrorism.” In one of the clips floated on social media, Dr. Naik is seen supporting Al-Qaeda founder Osama bin Laden. He claimed that this clip was doctored and being used out of context. He said he was “neither a saint, nor a terrorist for me.” Preacher Zakir Naik on Friday at a small banquet hall in Mazgaon, addressed media persons via Skype: “My statements were taken out of context; they were half sentences, and were doctored. I am a messenger of peace. It is condemnable for any human, whether Muslim or non-Muslim, to attac...

ফিলিস্তিনের ‘স্পাইডারম্যান’

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ১২ বছরের এক শিশুর কাজকারবারও এইটুকুন হওয়ার কথা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পুঁচকে বালক মোহাম্মদ আল শেখের কাজকারবার দেখে ভিরমি লেগে যাবে অনেকের। এই বয়সেই ও নিজের শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে নানা কসরত দেখাতে পারে। তাক লাগানোর মতো সেসব কসরত। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার চার ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের মোহাম্মদ আল শেখ অসম্ভব সব শারীরিক কসরত দেখাতে পারে। নিজের পায়ের পাতা উল্টো দিক দ িয়ে নিয়ে এসে কাঁধের ওপর নিতে পারে সে। নিজের শরীরকে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দিতে পারে। এ ছাড়া উঠের পিঠে উঠে ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো লাফাতেও পারে সে। আর এ কারণে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যাও দিয়েছে। ওই এলাকায় এখন সে তারকা। তবে এই তারকাখ্যাতি পেয়ে ক্ষান্ত নয় মোহাম্মদ, এখন সবাইকে তাক লাগানো শারীরিক কসরত দেখিয়ে নিজের নামটি সে লিখে নিতে চায় গিনেস বুকের পাতায়। ২০১৪ সালে হাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়। এ সময় প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে মোহাম্মদের। এই যুদ্ধাবস্থার মাঝেও লেব...