Skip to main content

রাজনৈতিক কলহের সূতায় ঝুলছে বাংলাদেশ



নিউজ এক্সপ্রেস ২৪ ডেস্ক



ঢাকা : সম্প্রতি ‘আলজাজিরা’য় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে দেওয়া হলো-

গত একমাসের ধর্মঘট ও রাজপথের অবরোধের কারণে রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের সরকার। এ অবস্থা থেকে শিগগিরই উত্তরণের কোনো রাস্তা দেখা যাচ্ছে না।

বিরোধীদল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বলেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল না করলে তারা ‘রাজপথ ছাড়বে না’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ইস্যুতে ছাড় না দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানী গোলাম সারওয়ার খান বলেন, ‘সরকারি ও বিরোধীদল পরস্পর রুদ্রমূর্তিতে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এর ফলে সৃষ্ট অচলাবস্থা অর্থনীতি থেকে সামাজিক সব বিষয়েই প্রবাব ফেলছে।’

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রবীণ এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা না কাটলে অচিরেই আমরা আইনের শাসন বেঙ্গে যাওয়াসহ নানা সহিংসতা দেখেতে পাব।’

দেশের এমন সময়ে এই সংকট দেখা দিলো যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ভিতের মধ্যে দাঁড়াচ্ছিল এবং নারীশক্তি, স্বাস্থ্য, দরিদ্রতা প্রভৃতি বিষয়ে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছিল।

এ ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাস্তায় নামা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। এছাড়া স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

তত্ত্বাবধায়কের ইতিহাস

১৯৯১ সালে একনায়ক এরশাদের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লগি ও বিএনপি পালাক্রমে একেকবার ক্ষমতায় এসেছে।
কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়কের কাছে ক্ষমতা দেয়ার পর তারা দু’বছর ক্ষমতায় থাকে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।
এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়।

এ বিষয় নিয়ে বিরোধীদল মাঠে নামায় তাদের শত-শত কর্মী এখন জেল খাটছে।

আবার রাস্তায় রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল না করলে তারা নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি’র মুখপাত্র তরিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভুলুণ্ঠিত করেছে ও জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাই গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনার ব্যাপারে অনড় আওয়ামী লীগ। দলটির মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে যদি সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হয়, তাহলে বাংলাদেশে কেন হবে না?’

আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি তার সহযোগী দল নিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে মাঠে নেমেছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর ৯ জন উচ্চপর্যায়ের নেতার বিচার চলছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।

খারাপ সময়

বাংলাদেশের প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সহিংসতাকে কোনো ছাড় দেবে না।

হাসিনা সরকারের কেবিনেট সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) দেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের উচিৎ সংসদে আসা ও নির্বাচনে অংশ নেয়া।’

এদিকে বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।
রাজনৈতিক এই অসহিষ্ণু অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েই চলছে।

এই অবস্থাকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য খুবই খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) চেয়ারম্যান কাজী আকরামুদ্দিন আহমেদ।

(শাহনেওয়াজ খান/২৮.১২.১২)



Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স