নিউজ এক্সপ্রেস : সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই মামলা চালানোর এখতিয়ার রিটকারীদের নেই— এই মর্মে রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সোমবার দুপুরে এ আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সংবিধানে বহাল থাকল।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সবশেষ শুনানি হয়। সেদিন ১৪ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি মনোনীত করে ২০১১ সালের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট।
চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। যেই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ-২ এর পর ২ (ক) যুক্ত হয়। ২ (ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নানা ধর্মবিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।
তার ২৩ বছর পর রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করেন। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়েছিল।
রুলে সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ২ (ক) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এসব রুলের ওপর হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চ শুনানির জন্য গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আবেদন করা হয়েছিল। পরে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। সেই ধারাবাহিকতায় ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি কার্যতালিকায় আসে।
আগের নিয়োগ করা ১৪ অ্যামিকাস কিউরি : আদালত এর আগে যে ১৪ জনকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করেছিলেন তারা হলেন— টি এইচ খান, কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন।
এদের মধ্যে এম জহির ও মাহমুদুল ইসলাম মারা গেছেন।
আবেদনকারীদের অধিকাংশই মারা গেছেন : ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে ২৮ বছর আগে যারা রিট আবেদনটি করেছিলেন তাদের অধিকাংশই মারা গেছেন।
আবেদনকারীরা হলেন— বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, বিচারপতি কে এম সোবহান, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাজনৈতিক-কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এদের মধ্যে সি আর দত্ত, বদরুদ্দীন উমর, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বেঁচে আছেন।
(এসকে/মার্চ ২৮, ২০১৬)
Comments
Post a Comment