Skip to main content

পান্তা-ইলিশ আর সাজগোজের বৈশাখ

শাহনেওয়াজ খা



পহেলা বৈশাখ এলেই ইলিশ-পান্তা আর বাহারি রঙে সাজার ধুম পড়ে যায়সারা দেশে যেভাবে ইলিশভাজা খাওয়ার ধুম পড়ে তাতে অনেকটা সংশয় জাগে এটা কি (ইলিশ খাওয়া) পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি না পরবর্তী উৎপাদন? চৈত্র-বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে তো দেশজুড়ে ইলিশ পাওয়ার কথা নয়কারণ ইলিশের প্রজনন মৌসুম আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর)মূলত ওই সময়ই ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসেএরপর অগ্রহায়ণ-পৌষে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েকিন্তু বর্তমানে বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার ধুম দেখে মনে হয় এ সময় হয়ত বাংলার খাল-বিলও ইলিশে ভরপুর থাকত!

মাঝে মাঝে ভাবি বৈশাখে ইলিশের খরা ও চড়া বাজারমূল্য দেখেও কি বাঙালির হুঁশ হয় না? সাংস্কৃতিক উৎসবের নামে ব্যবসায়ীরা রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছেশুধু কি ইলিশ, এখন তো বৈশাখের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকও রয়েছে! সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তো ওগুলো চাইহায়, বাংলায় কি আগে শুধু সাদা রংয়ের পোশাক পড়ার হিড়িক ছিল! বরং এখনো গ্রামীণ মেলা উপলক্ষ্যে বাহারি রংয়ের পোশাক তে দেখা যায়

এসব কার্যক্রমের কারণে নববর্ষ আজ শুধু আর বর্ষবরণ নয়, বিশাল এক কর্পোরেট বাণিজ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পহেলা বৈশাখের নামে চলছে উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত ভেজাল সংস্কৃতি আর রমরমা ব্যবসা। ভাত ভিজিয়ে পান্তা বানানো, নদী থেকে ধরে আনা ইলিশকে রাতারাতি মহামূল্য বানিয়ে আর নির্দিষ্ট রং ও ডিজাইনের পোশাক-পরিচ্ছেদ বিক্রির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকা। দেশের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগণের ওপর চেপে বসছে আরেকটি অযাচিত ব্যয়ের খাত। বিষয়টি নিয়ে নতুন প্রজন্মকে তাই ভাবার পাশাপাশি ইতিহাসের পাতায়ও কিছুটা চোখ বুলিয়ে নিতে হবে।

আসুন সংক্ষেপে বাংলা সন, মাস ও নববর্ষের ইতিহাসে চোখ বুলাই

বঙ্গাব্দ, বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি হল সৌর পঞ্জিকাভিত্তিক বর্ষপঞ্জি সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়এই সময়টাই এক সৌর বছরগ্রেগরীয় সনের মতো বঙ্গাব্দেও মোট ১২ মাসআকাশে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসাব হয়ে থাকে

বঙ্গাব্দ শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনেবঙ্গাব্দের সূচনা সম্পর্কে এ পর্যন্ত পাওয়া মতগুলোর মধ্যে তুলনামূলক নির্ভরযোগ্য মত হলোভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে সব কাজকর্ম পরিচালিত হতোমূল হিজরী পঞ্জিকা চন্দ্র মাসের ওপর নির্ভরশীলচন্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চন্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিনএ কারণে চন্দ্র বৎসরে ঋতুগুলো সবসময় একই মাস অনুযায়ী থাকে নাআর চাষাবাদ ও এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভরএ জন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চন্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চন্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব দেনফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জির অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেনতবে তিনি ২৯ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেনএজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়৯৬৩ হিজরী সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেনপ্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়

মূলত সুষ্ঠুভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন
পরবর্তী সময়ে খাজনা আদায়ের এই সময়কাল নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়কারণ বৈশাখ হলো গ্রীষ্মকালকৃষিনির্ভর বাঙালিদের জন্য এ সময়ে খাজনা পরিশোধ করা বেশ কষ্টকরএর চেয়ে বরং হেমন্তকালে খাজনা পরিশোধ করা সহজকারণ ওই সময় বাঙালির ঘরে ঘরে ফসল থাকেফসল বিক্রির মধ্য দিয়ে সবার হাতে টাকা-পয়সা আসেফলে খাজনা পরিশোধে সক্ষম হয় তারাএ ছাড়া ওই সময় ফসল ঘরে থাকায় পড়ে পিঠা তৈরির ধুমএকই সঙ্গে নদীতে পাওয়া যায় মাছের রাজাইলিশতাই এক সময় অগ্রহায়ণ মাসকে কেন্দ্র করে খাজনা আদায়ের জন্য বর্ষ শুরু করা হতো বলে অভিমত দিয়েছেন অনেক ইতিহাসবিদ

বর্ষবরণ

সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই বর্ষবরণ উদ্‌যাপন শুরু হয়তখন বছরের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতোএর পরের দিন ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতোএই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করাহালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হতোপ্রকৃতপক্ষে হালখাতা হলো বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াগ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেএই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে

মাস ও ঋতু পরিচিতি

বঙ্গাব্দের ১২ মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমণ্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করেএই নামগুলো নেওয়া হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ সূর্যসিদ্ধান্তথেকেবাংলা মাসের নামগুলো হচ্ছে
বৈশাখ - বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আষাঢ় - উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
শ্রাবণ - শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ভাদ্র - উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আশ্বিন - অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
কার্তিক - কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
অগ্রহায়ণ - মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
পৌষ - পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
মাঘ - মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ফাল্গুন - উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
চৈত্র - চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

ঋতু

গ্রীষ্ম - বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ
বর্ষা - আষাঢ়, শ্রাবণ
শরৎ - ভাদ্র, আশ্বিন
হেমন্ত - কার্তিক, অগ্রহায়ণ
শীত - পৌষ, মাঘ
বসন্ত - ফাল্গুন, চৈত্র

বাংলা সন সংস্কার

বাংলা একাডেমি বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো থেকে উত্তরণের প্রস্তাবনা দেয়বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনেরযদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেওয়া হয়েছেএই প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডএই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দী যাকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নিবাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকেএই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিটি বাংলা একাডেমির কাছে কতগুলো প্রস্তাব পেশ করেএগুলো হলো

বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ থেকে ভাদ্র হবে ৩১ দিনেরবাকি মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন থেকে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাসপ্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের। বাংলা একাডেমি সরকারিভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করেওদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এখনও পুরনো বাংলা সনের প্রচলনই রয়ে গেছে

বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল বা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখআধুনিক বা প্রাচীন যে কোনো পঞ্জিকাতেই এই বিষয়ে মিল রয়েছেবাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়বাংলা একাডেমি আধুনিক পঞ্জিকায় এই দিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে

বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলেএ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনেইংরেজি দিন শুর হয় মধ্যরাতেঐতিহ্যগতভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের (১৯৯৫) ১লা বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স