শাহনেওয়াজ খান
টাকার হাত-পা বা পাখা আছে বলে শুনি নি কখনো, দেখিও নি। তবু টাকা কীভাবে যেন চলে যায় তার হদিস পাই না। আমরা না হয় প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খরচ করি কিন্তু পুরো দেশের টাকা? আমার জানা মতে মার্কিন ডলার বা ইউরোর মতো বাংলাদেশি টাকা বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয় না। এমনকি পাচারকারীরাও টাকা পাচার করে না। তাই দেশের টাকা দেশেই থাকার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অর্থনীতিতে আমার মত কিঞ্চিৎ জ্ঞান রাখা লোকের পক্ষে পুরো দেশের টাকা উধাও (!) হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা বুঝার কথা নয়। অতটা বুঝতেও চাই না। কিন্তু প্রশ্ন জাগে বাজারে মূল্যস্ফীতি, জনগণের ওপর নানা কর বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়গুলো একই সঙ্গে ঘটায়। আসলে কীভাবে কী হচ্ছে?
বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জমি সব কিছুর ওপর কর কয়েক দফায় বেড়েছে। আরোপিত হয়েছে মোবাইল কলরেটের ওপর অতিরিক্ত কর। এমনকি উচ্চশিক্ষার টিউশন ফি-ও করের আওতা থেকে বাদ যায় নি। আয়করও (ইনকাম ট্যাক্স) বাড়ানো হয়েছে অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। ভাগ্যিস, এখনও ‘আউটকাম ট্যাক্স’ ধরা হয় নি!
একটা দেশে জনগণের ওপর করের বোঝা কখন বাড়ানো হয়? সাধারণত রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হলে বা রাষ্ট্র ঋণে জর্জরিত হলে। রাষ্ট্রীয় ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাপক আকারে তছরূপ বা লোকসান হলে এটার দায়ভার জনগণকেই বইতে হয় (সুবিধা ভোগ না করা সত্ত্বেও)। যেমনটা বর্তমান গ্রিসের দিকে তাকালে স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারা যায়। আমাদের দেশে করের বোঝা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণের দায় রয়েছে? প্রকাশ্যে না হলেও যদি অপ্রকাশ্যে থেকে থাকে তাহলে তা কী কারণে হয়েছে তছরূপ না লোকসান? আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, আমাদের দেশের ঋণের অবস্থা অতটা ভয়াবহ নয়।
তাহলে খেটে-খাওয়া মানুষের ওপর এত করের বোঝা কেন? যেখানে বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে যদি অপর বিষয়টি বিবেচনা করি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হওয়া। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেশ চালানোর মত পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলেই জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়। আমাদের দেশেও যদি এ ধরনের অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা গেল কোথায়? অথচ কিছুদিন পরপরই রিজার্ভে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনৈতিক অবস্থাও নাকি অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভাল!
দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তোষামোদকারী, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা টাকা আয়ের পরিমাণ বাড়িয়েই চলছেন। চারদিকে বাড়ি, গাড়ি, কেনাকাটা, জমির মূল্য ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালভাবে দেখলে বুঝা যায় অনেক টাকা তাদের হাতে। কিন্তু আয়কর পরিশোধের পরিমাণ দেখলে দেখা যায় ঠিক তার উল্টো। তাহলে তাদের টাকাগুলো গেল কোথায়? আগেই বলেছি টাকা উড়ে না বা হাঁটে না; এমনকি বাংলাদেশের টাকা অন্য দেশে বিক্রি বা অন্য দেশের ব্যাংকে নিয়ে গচ্ছিতও রাখা যায় না। বিদেশে নিতে হলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিণত করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও রিজার্ভ হিসেবে টাকা রাখে না, মার্কিন ডলার বা স্বর্ণ রাখে।
হায়, এত টাকা দেশে থাকায়ই হয়ত মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটছে! (আঁতেলমার্কা চিন্তা!)
মূল্যস্ফীতিও না হয় মেনে নিলাম। আমাদের মতো অর্থনীতিতে কম জ্ঞানসম্পন্নদের এটা না মানা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। কিন্তু সরকারি কোষাগারে এত টাকার প্রয়োজন কেন? কেন দেশের বেশিরভাগ মানুষকে এত কায়ক্লেশে জীবনযাপন করতে হচ্ছে? কেনই বা বাড়ছে করের বোঝা?
হায় কি বলতে কি বললাম। পাছে না আবার রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় পড়ি। আমার টাকা কোথায় গেল সেটা জানতে গেলে আমিই হব অপরাধী! এই মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কথা মনে পড়ছে। নিজের জমি খুইয়ে সেই জমিতে লাগানো বাগানের ফল খেয়ে চোর অপবাদ মাথায় নিতে হয় মালিককে। শেষ পর্যন্ত তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে—
“আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে—
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!”
টাকার হাত-পা বা পাখা আছে বলে শুনি নি কখনো, দেখিও নি। তবু টাকা কীভাবে যেন চলে যায় তার হদিস পাই না। আমরা না হয় প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খরচ করি কিন্তু পুরো দেশের টাকা? আমার জানা মতে মার্কিন ডলার বা ইউরোর মতো বাংলাদেশি টাকা বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয় না। এমনকি পাচারকারীরাও টাকা পাচার করে না। তাই দেশের টাকা দেশেই থাকার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অর্থনীতিতে আমার মত কিঞ্চিৎ জ্ঞান রাখা লোকের পক্ষে পুরো দেশের টাকা উধাও (!) হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা বুঝার কথা নয়। অতটা বুঝতেও চাই না। কিন্তু প্রশ্ন জাগে বাজারে মূল্যস্ফীতি, জনগণের ওপর নানা কর বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়গুলো একই সঙ্গে ঘটায়। আসলে কীভাবে কী হচ্ছে?
বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জমি সব কিছুর ওপর কর কয়েক দফায় বেড়েছে। আরোপিত হয়েছে মোবাইল কলরেটের ওপর অতিরিক্ত কর। এমনকি উচ্চশিক্ষার টিউশন ফি-ও করের আওতা থেকে বাদ যায় নি। আয়করও (ইনকাম ট্যাক্স) বাড়ানো হয়েছে অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। ভাগ্যিস, এখনও ‘আউটকাম ট্যাক্স’ ধরা হয় নি!
একটা দেশে জনগণের ওপর করের বোঝা কখন বাড়ানো হয়? সাধারণত রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হলে বা রাষ্ট্র ঋণে জর্জরিত হলে। রাষ্ট্রীয় ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাপক আকারে তছরূপ বা লোকসান হলে এটার দায়ভার জনগণকেই বইতে হয় (সুবিধা ভোগ না করা সত্ত্বেও)। যেমনটা বর্তমান গ্রিসের দিকে তাকালে স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারা যায়। আমাদের দেশে করের বোঝা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণের দায় রয়েছে? প্রকাশ্যে না হলেও যদি অপ্রকাশ্যে থেকে থাকে তাহলে তা কী কারণে হয়েছে তছরূপ না লোকসান? আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, আমাদের দেশের ঋণের অবস্থা অতটা ভয়াবহ নয়।
তাহলে খেটে-খাওয়া মানুষের ওপর এত করের বোঝা কেন? যেখানে বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে যদি অপর বিষয়টি বিবেচনা করি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হওয়া। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেশ চালানোর মত পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলেই জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়। আমাদের দেশেও যদি এ ধরনের অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা গেল কোথায়? অথচ কিছুদিন পরপরই রিজার্ভে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনৈতিক অবস্থাও নাকি অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভাল!
দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তোষামোদকারী, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা টাকা আয়ের পরিমাণ বাড়িয়েই চলছেন। চারদিকে বাড়ি, গাড়ি, কেনাকাটা, জমির মূল্য ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালভাবে দেখলে বুঝা যায় অনেক টাকা তাদের হাতে। কিন্তু আয়কর পরিশোধের পরিমাণ দেখলে দেখা যায় ঠিক তার উল্টো। তাহলে তাদের টাকাগুলো গেল কোথায়? আগেই বলেছি টাকা উড়ে না বা হাঁটে না; এমনকি বাংলাদেশের টাকা অন্য দেশে বিক্রি বা অন্য দেশের ব্যাংকে নিয়ে গচ্ছিতও রাখা যায় না। বিদেশে নিতে হলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিণত করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও রিজার্ভ হিসেবে টাকা রাখে না, মার্কিন ডলার বা স্বর্ণ রাখে।
হায়, এত টাকা দেশে থাকায়ই হয়ত মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটছে! (আঁতেলমার্কা চিন্তা!)
মূল্যস্ফীতিও না হয় মেনে নিলাম। আমাদের মতো অর্থনীতিতে কম জ্ঞানসম্পন্নদের এটা না মানা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। কিন্তু সরকারি কোষাগারে এত টাকার প্রয়োজন কেন? কেন দেশের বেশিরভাগ মানুষকে এত কায়ক্লেশে জীবনযাপন করতে হচ্ছে? কেনই বা বাড়ছে করের বোঝা?
হায় কি বলতে কি বললাম। পাছে না আবার রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় পড়ি। আমার টাকা কোথায় গেল সেটা জানতে গেলে আমিই হব অপরাধী! এই মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কথা মনে পড়ছে। নিজের জমি খুইয়ে সেই জমিতে লাগানো বাগানের ফল খেয়ে চোর অপবাদ মাথায় নিতে হয় মালিককে। শেষ পর্যন্ত তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে—
“আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে—
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!”
Comments
Post a Comment