Skip to main content

সম্ভাবনাময় পর্যটন দ্বীপ কুকরীমুকরী

শাহনেওয়াজ খান



বিস্তীর্ণ জলরাশি, সবুজ গাছপালা, মায়াময় হরিণ, রঙ-বেরঙের পাখি আর ম্যানগ্রোভ বন- একজন পর্যটকের জন্য আর কী চাই? যদি এ সবের সম্মিলন এক জায়গাতেই চান, তাহলে ঘুরে আসুন চর কুকরীমুকরী। ভোলা সদর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্যপিপাসুদের।

দ্বীপটির নামকরণের ইতিহাসটি কিন্তু বেশ অদ্ভুত। প্রায় ৪৫০ বছর আগে সৃষ্ট এ দ্বীপটিতে প্রথমদিকে ইঁদুর আর কুকুরের রাজত্ব ছিল। ইঁদুরকে স্থানীয় নামে ডাকা হতো ‘মেকুর’ বলে। সেই মেকুর থেকে মুকরী আর কুকুর থেকে কুকরী; ব্যস হয়ে গেল কুকরীমুকরী।

তবে সেখানে ইঁদুর আর কুকুরের রাজত্ব কিন্তু বেশিদিন টেকেনি। এই রাজত্বে প্রথমে ভাগ বসায় ওলন্দাজরা। এরপর তারা জোর করে অনেক বাঙালিকে এখানে নিয়ে আসে। পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাঙালিরা বিজয় নিশান উড়াচ্ছে ছোট্ট এই দ্বীপটিতে।



আর হ্যাঁ, ইতিহাসের পাশাপাশি আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি, দ্বীপটির চারপাশ দিয়ে ম্যানগ্রোভ বনের কোল ঘেঁষে বাঁধ তৈরির কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। বাঁধটি হয়ে গেলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও অনেক সুবিধা হবে।

দ্বীপটিতে যাওয়ার সময় মেঘনা নদী, সবুজ ম্যানগ্রোভ বন দেখে শুরুতেই যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। এরপর বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা কিংবা নৌকা ভ্রমণ আলাদা অনুভূতি জাগাবে। তবে হ্যাঁ, হরিণ কিন্তু এত সহজেই দেখা যাবে না। বনটি বেশ বিস্তৃত হওয়ায় হরিণগুলো বনের ভেতরের অংশেই থাকে। তাই মায়াবতী হরিণগুলোকে দেখতে বেশ বেগ পেতে হবে, পাশাপাশি থাকতে হবে ভাগ্যের ওপর ভরসা করে। মনে রাখবেন, হরিণ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত।

শেষ কবে বনেভোজন করেছেন মনে আছে? বনভোজন শব্দটি এখনও বহুল ব্যবহৃত হলেও বনের মধ্যে ভোজন করার সুযোগ কিন্তু আমাদের শহুরে মানুষদের নেই বললেই চলে। কুকরীমুকরীতে গিয়ে সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করে আসতে পারেন। বনের মধ্যে সবাই মিলে ভোজন করার এমন নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ সারাদেশে খুব কমই আছে।

আগে দ্বীপটির সঙ্গে লাগোয়া অবস্থানে ছিল মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের মোহনা। তবে কালক্রমে তা বেশ দূরে সরে গেছে। তাই এখন মোহনায় যেতে হলে লঞ্চ বা ট্রলার ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই নদী ভ্রমণের আনন্দ আরেকটু বাড়িয়ে দেবে অতিথি পাখি, নানা জাতের বক ও পানকৌড়ি।

কুকরীমুকরীতে যাওয়ার পথ

ঢাকা থেকে ভোলা নেমে সেখান থেকে বাসে চড়ে যেতে হবে চরফ্যাশন উপজেলায়। এরপর বাস অথবা মোটরসাইকেলে চড়ে যেতে হবে চর কচ্ছপিয়া। সেখান থেকে ট্রলারযোগে যেতে হবে কুকরীমুকরী দ্বীপে। কচ্ছপিয়া থেকে কুকরীমুকরীর উদ্দেশে দুপুর ১২টায় ট্রলার ছাড়ে। কুকরীমুকরী থেকে কচ্ছপিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়ে সকাল ৯টা ও দুপুর ২টায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে চড়ে সরাসরি বেতুয়া নেমে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে কচ্ছপিয়া হয়ে কুকরীমুকরী যেতে পারবেন।

আসার সময়ও একই রাস্তা। তবে জেনে রাখুন, বেতুয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে বিকাল ৪টায়। আর ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশে সর্বশেষ লঞ্চ রাত সাড়ে ৮টায় ছাড়লেও ভোলা থেকে কিন্তু সর্বশেষ রাত সাড়ে ৭টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে। আরেকটি কথা, কুকরীমুকরীতে এখনও থাকার ব্যবস্থা তেমন গড়ে ওঠেনি। তাই সেখানে থাকতে চাইলে আগে থেকেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যেতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স