Skip to main content

প্রাচীন স্থাপত্যের টানে

শাহনেওয়াজ খান



গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের জন্য খুব একটা সুবিধাজনক সময় নয়। তারপরও ওই সময়েই জয়পুরহাট-নওগাঁয় গিয়েছিলাম প্রাচীন স্থাপত্যের টানে। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নওগাঁয় অবস্থিত ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (সোমপুর বিহার) দেখা। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনাগুলো দেখার ইচ্ছা তো ছিলই।

ইচ্ছেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। বেশ কয়েকবার পরিকল্পনা করেও ভ্রমণসঙ্গীর অভাবে যাওয়া হয়নি। চাকরি জীবনে প্রবেশ করার পর সহকর্মী সুজন ভাই রাজী হওয়ায় সুযোগটা আর হারাতে চাইলাম না। নওগাঁর পাভেল ভাই আর জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল নওগাঁ নয়, জয়পুরহাট থেকে স্থাপনাগুলো বেশ ভালোভাবে ও দ্রুত সময়ে ঘুরা যায়। ব্যস, আব্দুল আলীম ভাইয়ের সর্বাত্মক সহায়তায় গরমকে উপেক্ষা করেই শুরু হল ভ্রমণ।

জয়পুরহাট শহর থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দূরত্ব মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার। আর নওগাঁ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। আমরা জয়পুরহাটে অবস্থান করায় খুব সহজেই সেখানে পৌঁছলাম। বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মতো এটাতেও সরকারি ব্যবস্থাপনা থাকলেও পর্যটক আকর্ষণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। চারদিকে প্রাচীর, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও জাদুঘর থাকলেও রাস্তাঘাটের অবস্থা যাচ্ছেতাই। নওগাঁ ও জয়পুরহাট উভয় ‍দিক থেকে আসার রাস্তা থাকলেও তা বেশ সরু ও ভাঙ্গা। পর্যটকরা তাই আশাহত হতেই পারেন। তবে সৌন্দর্যপিপাসুরা এত দমবেন না। যাতায়াত বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে তারা ছুটবেন এশিয়ার বৃহত্তম বিহারটির টিকে থাকা ভগ্নাবশেষের দর্শনে।
এক সময় হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে সরগরম থাকা বিহারটির বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। যৎসামান্য যা আছে তাও আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিশেষত এর বিশালত্ব ও প্রতিটি ইটের মধ্যে খোদাই করা কারুকার্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

জেলাটিতে অবস্থিত আরেকটি প্রাচীন বিহার জগদ্দল। ধামইরহাটে অবস্থিত জগদ্দল বিহারটি জেলা সদর থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানেও জয়পুরহাট থেকে যাতায়াতে সুবিধা। বিহারটি সোমপুরের মতো অতটা বড় নয়। এমনকি এর ধ্বংসাবশেষও তেমন নেই। শুধু দু-একটা দেয়াল টিকে আছে। আশা নিয়ে যাওয়া পর্যটকদের তাই মনোকষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে একই এলাকায় অবস্থিত আলতাদীঘি ও শালবন সেই কষ্ট কিছুটা ভুলিয়ে দেবে। ছোট আকারের শালবনের মাঝে অবস্থিত দীঘিটি বেশ বড়ই। দীঘিকে ছাপিয়ে বেশি ভালো লাগতে পারে শালবনে অবস্থিত বিশাল বিশাল উঁইঢিবি। ৪-৭ ফুট লম্বা ঢিবিগুলো বেশ দর্শনীয়।

পতিসরে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি যেতে অবশ্য বেশ বেগ পেতে হল। জায়গাটা নওগাঁ শহরের অপর প্রান্তে অবস্থিত। তাই জয়পুরহাট থেকে যাওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। আত্রাইয়ে অবস্থিত কাছারিবাড়িটি নওগাঁ শহর থেকেও ৪৮ কিলোমিটার দূরে। জয়পুরহাট থেকে উল্টোপথে হওয়ায় সময় বাঁচাতে ট্রেনে চড়ে যেতে হল। ট্রেনের অভিজ্ঞতাটি বেশ মজার। আহসানগঞ্জ স্টেশনে নেমে জানলাম এটাই আত্রাই! মানে যাহা আহসানগঞ্জ, তাহাই আত্রাই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কেউ সেখানে যেতে চাইলে আহসানগঞ্জ আসলে আত্রাইয়ের অপেক্ষায় বসে থাকবেন না যেন। সোজা নেমে পড়ুন।

স্টেশনে নেমেও পথ যেন শেষ হয় না। সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় অনেক দূর গিয়ে আবার ভ্যানে চড়ে যেতে হল। তাও বেশ দূরের পথ। এর চেয়েও বড় ঝামেলা হল গাড়ি পাওয়ার সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা। নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রত্যন্ত অঞ্চলটি ছেড়ে বের হওয়ার কোনো যানবাহন পাওয়া যাবে না।

কষ্ট করে পৌঁছানোর পর কাছারিবাড়িটি খুব একটা খারাপ লাগল না। বাড়িটিকে ঠিকমতো দেখাশোনা করা ছাড়াও রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র। বেশ পরিচ্ছন্ন বাড়িটি ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেল।
পতিসর থেকে নওগাঁ শহরে পৌঁছে ঘুরলাম বাংলাদেশের একমাত্র গাঁজা কারখানা (নব্বইয়ের দশক থেকে অবশ্য তা বন্ধ)। শহরটির বেশিরভাগ অঞ্চলই গাঁজা কারখানাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক সময়কার গাঁজা সোসাইটির জায়গা। বর্তমানে তা দখল-বেদখলে রয়েছে। শহরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্যারিমোহন পাঠাগারটিও উল্লেখযোগ্য।

জয়পুরহাটে থাকলাম অথচ সেই জেলারই কোনো প্রাচীন স্থাপনা ঘুরলাম না তাও কি হয়! খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামে লকমা রাজবাড়ি নামে পরিচিত একটি জমিদারবাড়ি রয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া স্থানে অবস্থিত রাজবাড়িটি ধ্বংসপ্রায়। কর্তৃপক্ষের অবহেলা এটির ক্ষতিগ্রস্তের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দোতলা বাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারা। ধ্বংসের মাঝেও সিঁড়ি অক্ষুন্ন থাকায় খুব সহজেই এর ছাদে উঠা যায়। বেশ খানিকটা স্থান ঘুরাও যায় অনায়াসে। দেখা যায় সীমান্তের ওপারে থাকা ভারত।

জয়পুরহাটে অবস্থানের আরেকটি সুবিধা হল দিনাজপুরে অবস্থিত হিলি স্থলবন্দরের নৈকট্য। শহরটি থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিলি। এ কারণে অনেকে মজা করে স্থলবন্দরটিকে জয়পুরহাটের অংশ বলে থাকেন। খুব অল্প সময়েই এখান থেকে হিলিতে যাওয়া যায়। আমারও গিয়েছিলাম। পণ্য খালাসের স্থানটিতে দর্শনীয় কিছু না থাকলেও একই দিনে নওগাঁ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর- তিন জেলা ঘুরার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

Never promoted terror, says Naik

News Express Desk : Accused of giving hate speeches, inciting acts of terror and disrespecting other religions, Dr. Naik said he had a right to express his view, given to him by the Constitution. He said he believed his religion was the best because, “the Koran says it. No other religious text or scripture claims this fact.” About inciting acts of terror, he challenged the media “to find out any instance where I have promoted terrorism or praised an act of terrorism.” In one of the clips floated on social media, Dr. Naik is seen supporting Al-Qaeda founder Osama bin Laden. He claimed that this clip was doctored and being used out of context. He said he was “neither a saint, nor a terrorist for me.” Preacher Zakir Naik on Friday at a small banquet hall in Mazgaon, addressed media persons via Skype: “My statements were taken out of context; they were half sentences, and were doctored. I am a messenger of peace. It is condemnable for any human, whether Muslim or non-Muslim, to attac...

এখনো চলছে রোহিঙ্গা নিধন

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি ২৫ আগস্টের আগে থেকেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করলেও এখন নিধনযজ্ঞ থামেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এরআরডব্লিউ। সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার আলামত পেয়েছেন তারা। স্থানীয় সময় গত রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫৪টি গ্রাম। এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের পর সংস্থাটি জানায়, ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়া...

ফিলিস্তিনের ‘স্পাইডারম্যান’

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ১২ বছরের এক শিশুর কাজকারবারও এইটুকুন হওয়ার কথা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পুঁচকে বালক মোহাম্মদ আল শেখের কাজকারবার দেখে ভিরমি লেগে যাবে অনেকের। এই বয়সেই ও নিজের শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে নানা কসরত দেখাতে পারে। তাক লাগানোর মতো সেসব কসরত। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার চার ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের মোহাম্মদ আল শেখ অসম্ভব সব শারীরিক কসরত দেখাতে পারে। নিজের পায়ের পাতা উল্টো দিক দ িয়ে নিয়ে এসে কাঁধের ওপর নিতে পারে সে। নিজের শরীরকে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দিতে পারে। এ ছাড়া উঠের পিঠে উঠে ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো লাফাতেও পারে সে। আর এ কারণে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যাও দিয়েছে। ওই এলাকায় এখন সে তারকা। তবে এই তারকাখ্যাতি পেয়ে ক্ষান্ত নয় মোহাম্মদ, এখন সবাইকে তাক লাগানো শারীরিক কসরত দেখিয়ে নিজের নামটি সে লিখে নিতে চায় গিনেস বুকের পাতায়। ২০১৪ সালে হাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়। এ সময় প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে মোহাম্মদের। এই যুদ্ধাবস্থার মাঝেও লেব...