Skip to main content

‘ট্র্যাজেডি কিং’ লিও

শাহনেওয়াজ খান
এ যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির প্রতিফলন। সব রকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভাগ্যকে টপকাতে পারছেন না নায়ক। নিয়তির অমোঘ নিয়মে বারবার পরাজিত হতে হচ্ছে তাকে। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির অবস্থাও সেই ট্র্যাজিক হিরোর মতো। প্রস্তুত মঞ্চ, সর্বোচ্চ চেষ্টা, সাফল্যের একেবারে দ্বারপ্রান্তে- কিন্তু হচ্ছে না। কিছুতেই ছিঁড়ছে না ভাগ্যের শিকে। ‘কিং লিও’ হিসেবে পরিচিত মেসি তাই পরিণত হয়েছেন ‘ট্র্যাজেডি কিং’-এ।

সুযোগ ছিল স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে খেলার। কিন্তু দারুণ গোছানো, ছন্দে থাকা দলটির ডাক উপেক্ষা করে জন্মস্থান আর্জেন্টিনার হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নেন বার্সালোনায় খেলা মেসি। এরপরই টানা দুইবার ইউরো ও একবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন! ভাগ্যকে মেনে নিয়েই ভাঙ্গাচোরা-তরুণ আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে মিশে যান মেসি। শুরুতে যুব বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করে জাতীয় দলের হয়েও রঙিন ক্যারিয়ারের ইঙ্গিত দেন। এর মাঝে ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হার। তারপরও দমেননি ‘ভিন্ন গ্রহের ফুটবলার’-এর খেতাব পাওয়া মেসি। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন গ্রেট দিয়েগো ম্যারাডোনার কোচিংয়ের পরও কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায়।

এরপর ব্রাজিলে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ। দুর্দান্ত খেলে দলকে প্রায় একাই ফাইনালে তোলেন মেসি। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েও ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। সেবার শেষ মুহূর্তে জার্মানির কাছে গোল খেয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় মেসিদের। সেই হারকে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত বলে আসছিলেন মেসি। তারপরও সব ভুলে আগামী ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপকে টার্গেট করেছিলেন তিনি। পরের বছর ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকার আসরে আবারো দুর্দান্ত পারফরম্যান্স মেসির। দলও উঠে ফাইনালে। কিন্তু প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠা চিলির কাছে টাইব্রেকারে হেরে খালি হাতেই ফিরতে হয় আর্জেন্টিনাকে। এবারও মলিন মুখে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নেন মেসি।

চলতি বছর ফুটবল বিশ্বের প্রাচীনতম আসর কোপা আমেরিকার শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করা হয় বিশেষ টুর্নামেন্টের। এবারো চমৎকার পারফরম্যান্স দেখান মেসি। প্রায় একাই দলকে ফাইনালে তোলার সঙ্গে দেশের পক্ষে গড়েন সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড। স্বদেশী গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার ৫৪ গোলকে পেছনে ফেলে ৫৫ গোল করে একক চ’ড়ায় বসেন মেসি। আবারো ফাইনাল, আবারো প্রতিপক্ষ চিলি। এবার আর সুযোগ মিস করতে চাইছিলেন না। আগের ফাইনালের মতো এবার অবশ্য অতটা নিষ্প্রাণ ছিলেন না। তবে জোরালো আক্রমণের মুখে বারবার ফাউল করে মেসিকে সেভাবে জ্বলে উঠতে দেয়নি চিলিয়ানরা। অবশেষে কোনো গোল না হওয়া ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। চিলির হয়ে প্রথম শটটি মিস করেন ভিদাল। তখনই অনেকে আর্জেন্টিনার শিরোপা দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু নিয়তি তার ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হিসেবে যে সাজিয়ে রেখেছিল লিওনেল মেসিকে! দলের পক্ষে প্রথম শট নিতে এসেই বলকে বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন তিনি। উড়িয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা ও নিজের শিরোপা জয়ের বাসনাও! টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনার ২৩ বছরের শিরোপা-খরা আরো বাড়িয়ে দেয় চিলি।

টানা তিন বছর তিনটি ফাইনালে হারের পর বেদনার্ত মেসি ক্ষোভে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দেন। একের পর এক ফাইনাল ব্যর্থতায় জাতীয় দলের হয়ে খেলার আর কোনো স্বার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেন না চলমান শতাব্দির এখন পর্যন্ত সেরা এই ফুটবলার। স্পেনের ক্লাব বার্সালোনার হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা ২৯ বছর বয়সী মেসির জন্য এই হার মেনে নেওয়া বেশ কষ্টকরই। ক্লাবের হয়ে এ পর্যন্ত ২৮টি শিরোপা জেতা মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন কেবল যুব বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক। গত শতাব্দির দুই গ্রেট পেলে ও ম্যারাডোনার কাতারে শামিল হতে তা যথেষ্ট নয় বলেই অনেকের অভিমত। তবে তার চেয়েও বড় কথা মেসির ফর্ম। সম্প্রতি বছরগুলোতে তার ফর্ম অনেকটা স্বপ্নের মতোই। বড় আসরেও ধরে রাখছেন সেই ফর্ম। কিন্তু ফাইনাল এলেই গুলিয়ে যায় সব। নিয়তি তাকে সাজিয়ে দেয় ‘ট্র্যাজেডি কিং লিও’ হিসেবেই!

(এসকে/জুন ২৯, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স