Skip to main content

‘সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’দেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে’




নিউজ এক্সপ্রেস : বন্দর, রেল যোগাযোগ,বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষাসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাইছে ভারত৷ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পেও ভারত বাংলাদেশের সহযোগী৷ তবে ভারতের বিশেষজ্ঞও বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দু-দেশেরই ক্ষতি করবে৷

ইরানের ছাবাহার বন্দর নির্মাণ চুক্তি সই হবার পর বাংলাদেশেও একটি সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত৷ ঢাকার সঙ্গে এ বিষয়ে জোর কথাবার্তা চলছে৷ আশা করা যায়, শীঘ্রই সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একটি বন্দর ও অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলতে চায় ভারত৷ মিয়ানমারেও অনরূপ একটি বন্দর তৈরি নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে৷ বাংলাদেশের মংলা এবং মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়েও কথাবার্তা চলছে অনেকদিন ধরেই, বলেছেন মোদী সরকারের জাহাজ চলাচল মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি৷

ইরানের ছাবাহার বন্দরে ভারতের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিপুল, কারণ, বন্দরের কাছেই গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ সেখানে খুব সস্তায় গ্যাস পাওয়া যাবে বলে ভারতের নালকো কোম্পানি সেখানে ইউরিয়া সার কারখানা তৈরি করবে৷ বাংলাদেশেও সস্তায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক কলকারখানা গড়ে তোলার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দেবে৷ গডকড়ি জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে বছরে ৬০ কোটি টন পণ্য যাতায়াত করে৷ সেটা জলপথে নিয়ে গেলে আরো বেশি সুবিধা হবে নানা দিক থেকে৷

কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এটা বাস্তবায়িত হলে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের লাভ হবে বেশি৷ বিগত বছরগুলিতে ভারত নামমাত্র সুদে বাংলাদেশকে মোট প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়৷ ১৬টি প্রকল্পে সেই টাকা ব্যয় করা হচ্ছে৷ কেনা হয়েছে ৪২৬টি উন্নত মানের বাস, কেনা হয়েছে ব্রডগেজ লাইনে চলার উপযোগী তেলবাহী ট্যাঙ্কার, তৈরি হয়েছে দুটি রেল সেতু৷

তবে গোল বেঁধেছে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সুন্দরবন এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে৷ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বাধা৷ থমকে রয়েছে এর নির্মাণকার্য৷ সুন্দরবনের সংবেদনশীল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হবে বলে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দুই বাংলার পরিবেশবিদ, নাগরিক সমাজ৷ ইউনেস্কো সুন্দরবনকে হেরিটেজ স্থান বলে ঘোষণা করেছে৷ এমনকি বাংলাদেশের হাইকোর্ট পর্যন্ত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না৷

রামসার কনভেনশনের নির্দেশিকায় সুন্দবনের জলাভূমি সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে৷ ঢাকা সেই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ৷ সুন্দরবনের জৈব বৈচিত্র্য এবং ম্যানগ্রোভ চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বাদাবন', তা ধ্বংস হলে বিপন্ন হয়ে পড়বে স্থানীয় লোকজনদের জীবন ও জীবিকা, কারণ, বাংলাদেশের বৃহত্তম কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে দরকার হবে ৪৭ লাখ টন কয়লা৷ সেই কয়লা নিয়ে যেতে হবে সড়ক পথে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ট্রাকে করে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে বাতাসে মিশবে ছাই, কয়লাগুঁড়ো, নির্গত হবে সালফার ডায়ক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস৷ কাজেই এর বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের যুক্তিসংগত কারণ আছে৷ যদিও বাংলাদেশ সরকারের মতে, উচ্চ-প্রযুক্তির দরুণ পরিবেশ দূষণের মাত্রা হবে খুবই নগণ্য৷

ভারতের পরিবেশবিদ অধ্যাপক এস.হাজরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে এই কেন্দ্র স্থাপন স্রেফ বাংলাদেশের জন্যই নয়, ভারতের জন্যও ক্ষতিকর৷ সুন্দরবন দুই বাংলার সম্পদ৷ তবে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুত, বায়ুবিদ্যুত, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা থেকে বিদ্যুৎ কিংবা বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদন সহজেই কম খরচে করা যেতে পারে৷

এপার বাংলা ওপার বাংলার মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এবার ভারতে তৈরি রেল ইঞ্জিন, কামরা চলবে বাংলাদেশে৷ এতে লাভ হবে দুদেশেরই৷ ইঞ্জিন ও কামরা একই প্রযুক্তির হলে দ্রুত যাত্রি ও মাল পরিবহনে সুবিধা হবে৷ সময় ও অর্থ দুই বাঁচবে দুদেশেরই, মনে করেন ভারতের রেলের কর্তাব্যক্তিরা৷

৭০ টি আধুনিক রেল কামরা এবং ২০টি ইঞ্জিন পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে৷ এগুলি তৈরি হয়েছে বারানসী কারখানায়৷ মোটকথা, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা-দিল্লির মৈত্রীর করমর্দন বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে কখনও শিথিল হবার নয়৷ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব যদি পারস্পরিক আস্থা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা অটুট থাকে৷ তথ্যসূত্র; ডয়েচেভেলে।

(এসকে/জুলাই ২২, ২০১৬)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স