শাহনেওয়াজ খান
১. সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত বলে বেশ লজ্জা হচ্ছে। এ দেশের অনেক সাংবাদিকের কাছেই ভারতীয় একটি বন্যহাতিও সুন্দরবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ নাম দেওয়া (অবশ্য তার কোনো বাহাদুরির খবর কেউ দিতে পারেনি) হাতিটির নিউজ কাভারেজের ক্ষেত্রে টেলিভিশন-পত্রিকাগুলোর নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা দেখলাম। দুইদিন আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তো কিছু সাংবাদিক নির্লজ্জতার চরম নিদর্শন প্রদর্শন করলেন। প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার পরিবর্তে তারা ব্যস্ত ছিলেন তৈলমর্দনে। এ দেশের পেশাজীবী সাংবাদিক সমাজকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই দুই দলের ব্যানার নিয়েই প্রকাশ্যে সাংবাদিকতা করে বেরাচ্ছেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ইস্যুতে প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক কর্মী ও আমলাদের মতো তৈলমর্দন করা আর যাই হোক পেশাদার সাংবাদিকের কাজ না। কিন্তু এটাই করলেন আমাদের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনের উচ্চ পদে আসীন সংবাদকর্মীরা। তাদের কথার ধরন সাংবাদিকসুলভ নয়- দলকানা রাজনৈতিক কর্মী ও ‘জ্বি হুজুর’ টাইপ ‘হাত ঘষা’ সরকারি কর্মচারীদের মতো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তারা প্রধানমন্ত্রীকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নানা দিক নিয়ে প্রশ্ন করার পরিবর্তে বরং এটা নির্মাণে উৎসাহ ও বিরোধিতাকারীদের দমনে তাগাদা দিয়েছেন। অথচ স্পর্শকাতর ইস্যুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা প্রয়োজন ছিল। ‘চামচা-মার্কা’ সাংবাদিকদের নিয়ে অবশ্য বেশি আশাও ছিল না। তবে তারা উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সংবাদ সম্মেলন ও প্রশ্নোত্তর পর্বগুলো টেলিভিশন বা অনলাইনে দেখতে পারেন। তাহলে অন্তত কিভাবে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন ও প্রশ্ন করতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
২. সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপালে ভারতের অংশীদারত্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলে আসছে। সম্প্রতি রাজপথ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা আরো বেগবান হয়েছে। এ নিয়ে এতদিন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা বা সংবাদ সম্মেলনের কথা বলা হয়নি। কিন্তু বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন এক সম্মেলনে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করলেন। ঠিক তার পরপরই এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুঝাই যায়, সম্মেলনটি জনগণের উদ্দেশ্যে নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী সেই রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করলেন। তিনি এই আন্দোলনের নেপথ্যে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে টেনে আনলেন বিএনপিকে। এতদিন এই আন্দোলন নিয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য করেনি এবং এ নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রমও নেই। অথচ সেই বিএনপিকেই কি না চালকের আসনে বসিয়ে হাস্যকরভাবে ফায়দা লুটতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী! হায়, জন-আন্দোলনে যদি এত অর্থ-কড়ির প্রয়োজন হতো তাহলে ভাষা আন্দোলন হতো না, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ হতো না।
৩. রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের দেখানো সেই পুরনো কিছু যুক্তি ও ছবি দেখালেন। অথচ পূর্ণাঙ্গ বিষয়টি তুলে ধরলেন না। আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা বা এ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না বলেও দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করলেন। তিনি উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবশ্যিকতা তুলে ধরলেন। বিদ্যুতের আবশ্যিকতা সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল। কিন্তু আন্দোলন হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে দূরে অন্য কোথাও স্থাপনের দাবি নিয়ে। এর মাঝে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন প্রকল্পে ঋণদানকারী ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে বিভিন্ন দেশের ১৭৫টি সংগঠনের আবেদনের বিষয় নিয়ে। ওই সংগঠনগুলো সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনায় এই প্রকল্পে ঋণ দানে বিরত থাকার জন্য এক্সিম ব্যাংককে আহ্বান জানিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে সত্যি কথাটা বলেলেন। তিনি জানালেন, বিদেশের কেউ অর্থায়ন না করলেও নিজস্ব অর্থায়নে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নিজস্ব অর্থায়ন বলতে নিজের টাকা নয়, জনগণের টাকাকেই নিজের মনে করে খরচ করা! অর্থাৎ, পক্ষে আর বিপক্ষে থাকেন আপনার অর্থ দিয়েই নির্মাণ করা হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
১. সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত বলে বেশ লজ্জা হচ্ছে। এ দেশের অনেক সাংবাদিকের কাছেই ভারতীয় একটি বন্যহাতিও সুন্দরবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ নাম দেওয়া (অবশ্য তার কোনো বাহাদুরির খবর কেউ দিতে পারেনি) হাতিটির নিউজ কাভারেজের ক্ষেত্রে টেলিভিশন-পত্রিকাগুলোর নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা দেখলাম। দুইদিন আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তো কিছু সাংবাদিক নির্লজ্জতার চরম নিদর্শন প্রদর্শন করলেন। প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার পরিবর্তে তারা ব্যস্ত ছিলেন তৈলমর্দনে। এ দেশের পেশাজীবী সাংবাদিক সমাজকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই দুই দলের ব্যানার নিয়েই প্রকাশ্যে সাংবাদিকতা করে বেরাচ্ছেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ইস্যুতে প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক কর্মী ও আমলাদের মতো তৈলমর্দন করা আর যাই হোক পেশাদার সাংবাদিকের কাজ না। কিন্তু এটাই করলেন আমাদের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনের উচ্চ পদে আসীন সংবাদকর্মীরা। তাদের কথার ধরন সাংবাদিকসুলভ নয়- দলকানা রাজনৈতিক কর্মী ও ‘জ্বি হুজুর’ টাইপ ‘হাত ঘষা’ সরকারি কর্মচারীদের মতো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তারা প্রধানমন্ত্রীকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নানা দিক নিয়ে প্রশ্ন করার পরিবর্তে বরং এটা নির্মাণে উৎসাহ ও বিরোধিতাকারীদের দমনে তাগাদা দিয়েছেন। অথচ স্পর্শকাতর ইস্যুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা প্রয়োজন ছিল। ‘চামচা-মার্কা’ সাংবাদিকদের নিয়ে অবশ্য বেশি আশাও ছিল না। তবে তারা উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সংবাদ সম্মেলন ও প্রশ্নোত্তর পর্বগুলো টেলিভিশন বা অনলাইনে দেখতে পারেন। তাহলে অন্তত কিভাবে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন ও প্রশ্ন করতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
২. সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপালে ভারতের অংশীদারত্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলে আসছে। সম্প্রতি রাজপথ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা আরো বেগবান হয়েছে। এ নিয়ে এতদিন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা বা সংবাদ সম্মেলনের কথা বলা হয়নি। কিন্তু বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন এক সম্মেলনে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করলেন। ঠিক তার পরপরই এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুঝাই যায়, সম্মেলনটি জনগণের উদ্দেশ্যে নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী সেই রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করলেন। তিনি এই আন্দোলনের নেপথ্যে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে টেনে আনলেন বিএনপিকে। এতদিন এই আন্দোলন নিয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য করেনি এবং এ নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রমও নেই। অথচ সেই বিএনপিকেই কি না চালকের আসনে বসিয়ে হাস্যকরভাবে ফায়দা লুটতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী! হায়, জন-আন্দোলনে যদি এত অর্থ-কড়ির প্রয়োজন হতো তাহলে ভাষা আন্দোলন হতো না, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ হতো না।
৩. রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের দেখানো সেই পুরনো কিছু যুক্তি ও ছবি দেখালেন। অথচ পূর্ণাঙ্গ বিষয়টি তুলে ধরলেন না। আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা বা এ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না বলেও দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করলেন। তিনি উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবশ্যিকতা তুলে ধরলেন। বিদ্যুতের আবশ্যিকতা সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল। কিন্তু আন্দোলন হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে দূরে অন্য কোথাও স্থাপনের দাবি নিয়ে। এর মাঝে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন প্রকল্পে ঋণদানকারী ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে বিভিন্ন দেশের ১৭৫টি সংগঠনের আবেদনের বিষয় নিয়ে। ওই সংগঠনগুলো সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনায় এই প্রকল্পে ঋণ দানে বিরত থাকার জন্য এক্সিম ব্যাংককে আহ্বান জানিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে সত্যি কথাটা বলেলেন। তিনি জানালেন, বিদেশের কেউ অর্থায়ন না করলেও নিজস্ব অর্থায়নে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নিজস্ব অর্থায়ন বলতে নিজের টাকা নয়, জনগণের টাকাকেই নিজের মনে করে খরচ করা! অর্থাৎ, পক্ষে আর বিপক্ষে থাকেন আপনার অর্থ দিয়েই নির্মাণ করা হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
Comments
Post a Comment