Skip to main content

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাজনীতি

শাহনেওয়াজ খান



যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই অনেকে হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রায় বসিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল সামনে আসতেই তাদের ভুল ভাঙ্গে। তাদের চমকে দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে প্রয়োজনীয় ইলেক্টরাল ভোট লাভ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উদ্ধত আচরণ ও উল্টা-পাল্টা কথাবার্তার কারণে অনেকেই ধারণা করেছিলেন উর্বর মস্তিষ্কের এই ধনকুবেরকে ভোট দিয়ে অন্তত প্রেসিডেন্ট বানাবে না মার্কিনীরা। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের ধারণা পাল্টে দিয়ে তাকেই নেতা হিসেবে নির্বাচিত করল দেশটির জনগণ। প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন না হিলারি। বোধ হয় মার্কিনীদের ধারণা, নারীরা এখনও দেশ শাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারেননি। শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারলে হয়ত বিষয়টা বিবেচনা করে দেখতে পারে তারা। এক্ষেত্রে মার্কিন জনগণ বেশ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে বলা যায়। অন্তত আমাদের বাংলাদেশিদের মতো নয়, বেশ হিসেবি।

এবারের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে বেশ উচ্ছ্বাস, আলোচনা লক্ষ্য করা গেছে। একেক সময় তো মনে হত আমাদের দেশেই বুঝি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আছেই, দেশীয় গণমাধ্যমগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন ছেপেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর। এতটা প্রচারণা বিশ্বের অনেক নামি-দামি সংবাদমাধ্যমেও পায়নি। অনেকে আবার আশা করেছিলেন হিলারি জয়লাভ করলে বাংলাদেশ, বিশেষ করে এদেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী লাভবান হবে। তাদের আশায় গুঁড়েবালি। আদতে তারা খবরই রাখে না যে, যুক্তরাষ্ট্রে যেই প্রেসিডেন্ট হোক তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধু যুক্তরাষ্ট্র কেন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অবস্থাও এ ধরনেরই। ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরও একই ধরনের অভিব্যক্তি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ঘটনা একই। কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপির সাথেই বেশি একতরফা নিজ দেশের স্বার্থবিরুদ্ধ চুক্তি করল ক্ষমতাসীন সরকার। মূলত বৈশ্বিক রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বা শত্রু রাষ্ট্র নেই। প্রকৃতপক্ষে সবাই ‘স্বার্থ রাষ্ট্র’ ধারণা মেনে চলে। যখন যার সাথে স্বার্থ জড়িত তখন সে বন্ধু, বিপক্ষে গেলেই শত্রু। বেশি দূর যাওয়া লাগবে না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে চোখ বুলান দেখবেন জাপানে দুটি পারমাণবিক বোমা মেরে ইতিহাসের নৃশংসতম হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র। অথচ সেই দেশটিই কি না বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত জাপানের সবচেয়ে বড় বন্ধু! শুধু তাই নয় বিশ্বযুদ্ধের মূল হোতা জার্মানি আজ তখনকার সেই শত্রু রাষ্ট্রগুলোরই পরম বন্ধু।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে অবশ্য সমালোচনা আছে আগে থেকেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলা দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্য দল বা প্রার্থী থাকলেও তা একান্তই গৌণ। প্রকৃতপক্ষে এই দুই দলের দুই প্রার্থীর বাইরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ দুই প্রার্থীই বেশিরভাগ জনগণের অপছন্দের হলেও কিছু করার নেই। এ বিষয়ে অবশ্য মার্কিন ভাষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নোয়াম চমস্কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার ভাষায়- যুক্তরাষ্ট্র চালায় মূলত ব্যবসায়ীরা। তাদের দুই হাত একটি ডেমোক্রেটিক অন্যটি রিপাবলিকান। যখন যাদের প্রয়োজন হয় তখন তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। চমস্কির এই বক্তব্যের সূত্র ধরে আরেকটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টি বা রিপাবলিকান পার্টি- কেউই একটানা দুইবারের বেশি দেশ শাসন করতে পারেনি। এবার তাই রিপাবলিকান ট্রাম্পের জয় ছিল অবশ্যম্বভাবী। দুই হাতকেই তো সমান শক্তিশালী রাখতে হয়। নয়তো নিজের এক হাতই যে দুর্বল হয়ে যাবে!

নির্বাচনের আগে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসী ও মুসলিমদের বিরেুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। মুসলিমরা তাই স্বভাবতই তার বিপেক্ষে ছিল। এমনকি অনেকে প্রকাশ্যে ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশ-বিক্ষোভও করেছেন। ভুলে যাবেন না- উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের উত্থানের পেছনে রয়েছে মার্কিন সরকারের অর্থায়ন। যার সরবরাহকারী মূলত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সুতরাং, ট্রাম্পের পরিবর্তে হিলারি যে খুব ভালো কিছু করতেন তা কিন্তু নয়। ভদ্রবেশে তিনিও মুসলিমদের বড় ক্ষতিসাধনেই লিপ্ত থাকতেন। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ এক মার্কিন বিশ্লেষক বলেন, ‘ইরাক-সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে বিদ্রোহী দলগুলোকে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত মুসলিমদের জিহাদের পথে নামিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে অনেক দিন ধরে জিহাদ থেকে দূরে থাকা মুসলিমদের মধ্যে আবারো জিহাদের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিচ্ছে। এই মতাদর্শের পুনর্জাগরণই এক সময় মার্কিনীদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে মুসলিমদের নিয়ে যা বলেছেন সে ধরনের কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করলে হয়তবা অনেকের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া জিহাদ নয়, লুপ্ত ঈমানও জাগ্রত হতে পারে। ব্যবসায়ী ট্রাম্প হয়তবা সব অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে কঠোর হবেন না। কারণ, কম মূল্যের শ্রমের বাজার তিনি এত সহজে নষ্ট করতে চাইবেন না। একই সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়াসহ আপাত অনেক বৈরীভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সাথে ব্যবসায়িক-রাজনৈতিক মিত্রতা করে ফায়দা লুটতে পারেন। সিরিয়া যুদ্ধে বেশ কৌশলে যার সূচনা করে গেছেন বারাক ওবামা।

মজার বিষয় হল- নির্বাচনের আগে যারা ট্রাম্পের ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন তাদের অনেকেই এখন ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। অনেকের কাছেই রাতারাতি ট্রাম্প নায়ক বনেও গেছেন। ইতিহাস শেষ পর্যন্ত বিজয়ীদেরকেই মনে রাখে; জনগণও?

Comments

Popular posts from this blog

এখনো চলছে রোহিঙ্গা নিধন

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি ২৫ আগস্টের আগে থেকেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করলেও এখন নিধনযজ্ঞ থামেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এরআরডব্লিউ। সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার আলামত পেয়েছেন তারা। স্থানীয় সময় গত রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫৪টি গ্রাম। এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের পর সংস্থাটি জানায়, ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়া...

Never promoted terror, says Naik

News Express Desk : Accused of giving hate speeches, inciting acts of terror and disrespecting other religions, Dr. Naik said he had a right to express his view, given to him by the Constitution. He said he believed his religion was the best because, “the Koran says it. No other religious text or scripture claims this fact.” About inciting acts of terror, he challenged the media “to find out any instance where I have promoted terrorism or praised an act of terrorism.” In one of the clips floated on social media, Dr. Naik is seen supporting Al-Qaeda founder Osama bin Laden. He claimed that this clip was doctored and being used out of context. He said he was “neither a saint, nor a terrorist for me.” Preacher Zakir Naik on Friday at a small banquet hall in Mazgaon, addressed media persons via Skype: “My statements were taken out of context; they were half sentences, and were doctored. I am a messenger of peace. It is condemnable for any human, whether Muslim or non-Muslim, to attac...

ফিলিস্তিনের ‘স্পাইডারম্যান’

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ১২ বছরের এক শিশুর কাজকারবারও এইটুকুন হওয়ার কথা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পুঁচকে বালক মোহাম্মদ আল শেখের কাজকারবার দেখে ভিরমি লেগে যাবে অনেকের। এই বয়সেই ও নিজের শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে নানা কসরত দেখাতে পারে। তাক লাগানোর মতো সেসব কসরত। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার চার ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের মোহাম্মদ আল শেখ অসম্ভব সব শারীরিক কসরত দেখাতে পারে। নিজের পায়ের পাতা উল্টো দিক দ িয়ে নিয়ে এসে কাঁধের ওপর নিতে পারে সে। নিজের শরীরকে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দিতে পারে। এ ছাড়া উঠের পিঠে উঠে ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো লাফাতেও পারে সে। আর এ কারণে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যাও দিয়েছে। ওই এলাকায় এখন সে তারকা। তবে এই তারকাখ্যাতি পেয়ে ক্ষান্ত নয় মোহাম্মদ, এখন সবাইকে তাক লাগানো শারীরিক কসরত দেখিয়ে নিজের নামটি সে লিখে নিতে চায় গিনেস বুকের পাতায়। ২০১৪ সালে হাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়। এ সময় প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে মোহাম্মদের। এই যুদ্ধাবস্থার মাঝেও লেব...