নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি তার দেশে রোহিঙ্গা গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছেন এবং সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন তীব্রতর করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল রাষ্ট্রীয় অপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ।
লন্ডনের কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়-কিউএমইউএলের আইন স্কুলের 'ইন্টারন্যাশনাল স্টেট ক্রাইম ইনিশিয়েটিভের (আইএসসিআই) গবেষকরা এ অভিযোগ করেন। তারা গত বছর কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের আরাকানে সরেজমিনে চালানো এক গবেষণায় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন।
গবেষণায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, দাসত্বমূলক শ্রম, অত্যাচার, যৌন সহিংসতা, বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং পুরো জাতিটিকে ধ্বংস করে ফেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এসব অপরাধের ঘটনা থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
কিউএমইউএলের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইএসসিআইয়ের পরিচালক পেনি গ্রিন বলেছেন, ২০১৫ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির বিজয়ও রোহিঙ্গা নিপীড়নের অবসান ঘটাতে পারেনি।
তিনি বলেন, চলতি বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নতুন রাজত্ব শুরু হয়েছে, যা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। আমি ধারাবাহিকভাবে দেখছি হত্যা, গণগ্রেফতার, গণধর্ষণ, গণনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ এবং গ্রামের পর গ্রাম গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে।
গবেষকরা বলেছেন, তারা রাখাইনে পরিস্থিতির যে খবর পেয়েছেন তাতে করে তারা একটি অবরুদ্ধ-আতঙ্কগ্রস্ত এবং বাঁচার জন্য মরিয়া জনগোষ্ঠীর চিত্র উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তারা সতর্ক করে বলেছেন যে, তারা যে প্রতিবেদন পেয়েছেন তাতে রাখাইনে ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং সহিংসতার পাক্কা খবর আছে। বিশেষ করে ১৯৭৭-৭৮ সালে এবং ১৯৯১-৯২ সালে নিষ্ঠুরতম-বৈষম্যমূলক দমন অভিযান চালানোর ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে চলমান ঘটনা প্রবাহে।
আইনজীবী অ্যালিসিয়া দে লা কাউর ভেনিং বলেন, যেসব ঘটনা ঘটছে তা অস্বস্তিকর হলেও পুরোপুরি একটি গণহত্যার প্রক্রিয়ার ধরন সম্পর্কে ধারণা দেয়।
তিনি বলেন, নিপীড়নের জন্য টার্গেট করা গোষ্ঠীকে শক্তিহীন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি নৈতিক সহানুভূতিকে হেয় প্রতিপণ্ন করার মধ্য দিয়ে গণহত্যা শুরু হয়। পরিণামে এক পর্যায়ে নির্যাতনের বিভিন্ন বিভৎস রূপ ধারণ করে, বিশেষ করে সহিংসতাকারীদের যখন কোনও জবাবদিহিতা থাকে না তখন ব্যাপকভাব হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়।
গবেষকরা বলেছেন, বতর্মানে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগণ স্বাস্থ্যসেবা,জীবিকা ও খাদ্য বঞ্চিত হয়ে ইত্যাদি বিষয়ে স্বাভাবিক জীবন এমন দুর্বল হয়ে পড়ছে যে তারা গণহত্যার স্তরে নিপতিত হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা জাতিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে এমনভাবে খর্ব করা যেন তারা আর সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে জড়িত হওয়ার সামর্থ্য না রাখে।
আইএসসিআই গবেষকরা অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডির কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ বছরের শুরুতে সুচি বিভিন্ন দেশের সরকারকে 'রোহিঙ্গা' পরিভাষাটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়েছেন। আর মিয়ানমার সরকার অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি তাদের দানব হিসেবে তুলে ধরে আসছে।
গবেষকরা বলেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম 'গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার' রাখাইন রাজ্যের জন্য রোহিঙ্গাদের হুমকি হিসেবে তুলে ধরতে আকারে ইঙ্গিতে তাদের 'সন্ত্রাসী' 'বিদেশী' 'এবং 'ক্ষতিকর কাঁটা' আখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেছে এবং দেশটির বিচার ব্যবস্থা রোহিঙ্গা নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অধ্যাপক পেনি গ্রিন বলেছেন, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতের উদাসীন রয়েছেন কিন্তু এটা সত্য যে এটিই তার নেতৃত্বের আসল পরীক্ষা। চলমান সংকটের মধ্যে সু চি কিংবা তার প্রেসিডেন্ট তিন চিয়াও পরিস্থিতি দেখতে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেননি।
(এসকে/নভেম্বর ২৬, ২০১৬)
Comments
Post a Comment