শাহনেওয়াজ খান
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ‘ধার’ বিষয়টি কারণে-অকারণে সবারই কম-বেশি প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে আমি বোধ হয় কয়েক ধাপ এগিয়েই ছিলাম। না, টাকা ধার নেওয়ার দিক থেকে নয় বই ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে! বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে আর ফেরত দিতেন না। আমার বিষয়টা অবশ্য সে রকম নয়। আমি যথাসময়ে বই ফেরত দিতাম। কারণ, বইগুলো ছিল সিলেবাস ও পরীক্ষার পড়ার জন্য।
বিষয়টা অনেকের কাছে এতটা অসহনীয় (!) পর্যায়ে গিয়েছিল যে, চতুর্থ বর্ষে এসে হলের কয়েক সহপাঠী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বই ধার না দেওয়ার। যদিও তাদের সেই উদ্যোগ শুরুতেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যারা ধার দেবে না বলেছিল তাদের কাছ থেকেই প্রথমে ধার নেই। তারপরও বুঝা যায়, আমার ধার নেওয়ার ঘটনায় কতটা বিরক্ত (!) বোধ করত তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই যার বই ধারের মাধ্যমে চলেছে আনুষ্ঠানিক বিদায়টাতেও তার সেই ঐতিহ্য বজায় না থাকলে চলে! তবে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সমাবর্তন পর্বে বই ধার নেওয়ার কোনো উপায় না থাকায় বেছে নিতে হয় অন্য পদ্ধতি। আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল বিদায়বেলায়ও যেন ধার ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারি। শুধু ইচ্ছা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অজ্ঞতা ও অব্যবস্থাপনাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগে থেকেই ধারণা ছিল, সমাবর্তনের সময় মূল সনদপত্র ও গাউন-ক্যাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলার সৃষ্টি করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই আমি আগেই সব ধরনের মূল সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলে রেখেছি। এ জন্য সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশনও করি নি।
রেজিস্ট্রেশন না করলেও অনেকে সহপাঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া ও নিজ ক্যাম্পাসটা আবারো দেখার জন্য সমাবর্তনে যোগ দেই। মনে মনে ইচ্ছা ছিল, সমাবর্তনের দিন গাউন আর ক্যাপ কারো কাছ থেকে ধার করব, তারপর ছবি তুলব। ব্যস- সমাবর্তন কমপ্লিট! সাবেক সহকর্মী ও ক্যাম্পাসের বড় ভাই ওয়াহিদ সুজনকে ধার দেওয়ার কথা বলে রেখেছিলাম। তিনি রাজিও ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত সেটার প্রয়োজন হয় নি। সৌভাগ্যবশত বন্ধু নাজমুলের নেওয়া দুটো গাউনের একটা পেয়ে গেলাম। এনামও তার দুটো গাউনের একটা দিতে চাইছিল, কিন্তু কি আর করা শরীর তো আমার একটাই!
ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে মনের মধ্যে একটা খচখচ ছিল- ভাড়া করা গাউনটা তো কর্তৃপক্ষ ফেরত নেবে, কিন্তু ‘ক্যাপ’- ওটা তো আজীবনের স্মৃতি। রেজিস্ট্রেশন না করায় ক্যাপ তো পাব না। ছবি না হয় কারো ক্যাপ নিয়ে তুলে নেব কিন্তু ঘরে তো তা রাখা হবে না। সমাবর্তনের আগে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথেই শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নাকি ক্যাপ দেবে না! হায়, আমার অনুমানই সত্যি, আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা। এরই মধ্যে ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্যাপ দেয় না’- এ কথা বলে নিজেদের অজ্ঞতা ও খামখেয়ালীপনার স্বাাক্ষর রাখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। শুধু তাই নয়, মূল সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ঘটল আমার পূর্বানুমান করা নানা ভুলভ্রান্তি। বন্ধু ইমরোজ তো মাস্টার্সের সনদপত্রই পেল না। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন করে ঝামেলামুক্ত হওয়ার পরিবর্তে দ্বিগুন ঝামেলা!
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ক্যাপ সংগ্রহ করল। এখানেও পেলাম ধারের সুযোগ! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া বন্ধু আরিফের ক্যাপটা নিয়েই কাটিয়ে দিলাম দিন। বেচারা তো বুথ আর অনুষ্ঠানেই কাটিয়ে দিল সকাল খেকে বিকাল পর্যন্ত। তাই এই পুরো সময় ক্যাপটি আমার মাথায়ই থাকল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের শেষ দিনে উচ্ছ্বাস আর ভালো লাগার সাথে তাই ধার ঐতিহ্যও মহাসমারোহেই টিকে রইল।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ‘ধার’ বিষয়টি কারণে-অকারণে সবারই কম-বেশি প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে আমি বোধ হয় কয়েক ধাপ এগিয়েই ছিলাম। না, টাকা ধার নেওয়ার দিক থেকে নয় বই ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে! বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে আর ফেরত দিতেন না। আমার বিষয়টা অবশ্য সে রকম নয়। আমি যথাসময়ে বই ফেরত দিতাম। কারণ, বইগুলো ছিল সিলেবাস ও পরীক্ষার পড়ার জন্য।
বিষয়টা অনেকের কাছে এতটা অসহনীয় (!) পর্যায়ে গিয়েছিল যে, চতুর্থ বর্ষে এসে হলের কয়েক সহপাঠী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বই ধার না দেওয়ার। যদিও তাদের সেই উদ্যোগ শুরুতেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যারা ধার দেবে না বলেছিল তাদের কাছ থেকেই প্রথমে ধার নেই। তারপরও বুঝা যায়, আমার ধার নেওয়ার ঘটনায় কতটা বিরক্ত (!) বোধ করত তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই যার বই ধারের মাধ্যমে চলেছে আনুষ্ঠানিক বিদায়টাতেও তার সেই ঐতিহ্য বজায় না থাকলে চলে! তবে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সমাবর্তন পর্বে বই ধার নেওয়ার কোনো উপায় না থাকায় বেছে নিতে হয় অন্য পদ্ধতি। আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল বিদায়বেলায়ও যেন ধার ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারি। শুধু ইচ্ছা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অজ্ঞতা ও অব্যবস্থাপনাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগে থেকেই ধারণা ছিল, সমাবর্তনের সময় মূল সনদপত্র ও গাউন-ক্যাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলার সৃষ্টি করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই আমি আগেই সব ধরনের মূল সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলে রেখেছি। এ জন্য সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশনও করি নি।
রেজিস্ট্রেশন না করলেও অনেকে সহপাঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া ও নিজ ক্যাম্পাসটা আবারো দেখার জন্য সমাবর্তনে যোগ দেই। মনে মনে ইচ্ছা ছিল, সমাবর্তনের দিন গাউন আর ক্যাপ কারো কাছ থেকে ধার করব, তারপর ছবি তুলব। ব্যস- সমাবর্তন কমপ্লিট! সাবেক সহকর্মী ও ক্যাম্পাসের বড় ভাই ওয়াহিদ সুজনকে ধার দেওয়ার কথা বলে রেখেছিলাম। তিনি রাজিও ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত সেটার প্রয়োজন হয় নি। সৌভাগ্যবশত বন্ধু নাজমুলের নেওয়া দুটো গাউনের একটা পেয়ে গেলাম। এনামও তার দুটো গাউনের একটা দিতে চাইছিল, কিন্তু কি আর করা শরীর তো আমার একটাই!
ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে মনের মধ্যে একটা খচখচ ছিল- ভাড়া করা গাউনটা তো কর্তৃপক্ষ ফেরত নেবে, কিন্তু ‘ক্যাপ’- ওটা তো আজীবনের স্মৃতি। রেজিস্ট্রেশন না করায় ক্যাপ তো পাব না। ছবি না হয় কারো ক্যাপ নিয়ে তুলে নেব কিন্তু ঘরে তো তা রাখা হবে না। সমাবর্তনের আগে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথেই শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নাকি ক্যাপ দেবে না! হায়, আমার অনুমানই সত্যি, আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা। এরই মধ্যে ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্যাপ দেয় না’- এ কথা বলে নিজেদের অজ্ঞতা ও খামখেয়ালীপনার স্বাাক্ষর রাখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। শুধু তাই নয়, মূল সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ঘটল আমার পূর্বানুমান করা নানা ভুলভ্রান্তি। বন্ধু ইমরোজ তো মাস্টার্সের সনদপত্রই পেল না। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন করে ঝামেলামুক্ত হওয়ার পরিবর্তে দ্বিগুন ঝামেলা!
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ক্যাপ সংগ্রহ করল। এখানেও পেলাম ধারের সুযোগ! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া বন্ধু আরিফের ক্যাপটা নিয়েই কাটিয়ে দিলাম দিন। বেচারা তো বুথ আর অনুষ্ঠানেই কাটিয়ে দিল সকাল খেকে বিকাল পর্যন্ত। তাই এই পুরো সময় ক্যাপটি আমার মাথায়ই থাকল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের শেষ দিনে উচ্ছ্বাস আর ভালো লাগার সাথে তাই ধার ঐতিহ্যও মহাসমারোহেই টিকে রইল।
Comments
Post a Comment