নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই 'লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস' সিনেমাটিকে নানা কারণে স্থায়ী আসন দিতে হয়। সমালোচকরাও তা দিতে কার্পণ্য করেননি কখনও। বার্নার্দো বার্তোলুচ্চির কাল্ট সিনেমা হিসেবে তার গুরুত্ব জানতেই হয় ফিল্ম স্টাডির শিক্ষার্থীদের। কিন্তু আম দর্শক ছবিটিকে মনে রাখেন এমন কিছু কারণে, যা সব সময়ে হয়তো স্বস্তিবাচক নয়। অপরিমিত এবং অতিমাত্রিক যৌনতার অজুহাতে ছবিটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান অনেকেই। কিন্তু সেই সব সমালোচনার জবাবে বার্তোলুচ্চির ভক্তরা বলেন, এই ছবিতে অন্তর্লীন অস্তিত্ব-সংকটের কথা,যাকে অতিক্রম করা যায়নি ১৯৭২ থেকে আজও।
এবার ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’ আবার সংবাদ শিরোনামে কিন্তু এক আশ্চর্য কারণে। পরিচালক বার্নার্দো বার্তোলুচ্চির এক অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার সম্প্রতি প্রকাশিত হলে জানা যায়, এই ছবির এক অতি ভয়াবহ ধর্ষণদৃশ্যের শুটিংয়ের সময়ে অভিনেত্রী মারিয়া শ্নেইডারের সম্মতিই নেননি তিনি। নায়িকার সম্মতি ব্যতিরেকেই তোলা হয় সেই বিতর্কিত দৃশ্য।
এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পরে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন জেসিকা চ্যাস্টেইন এবং ক্রিস ইভান্সের মতো হলিউড তারকা। টুইটারে তারা জানিয়েছেন, ৪৮ বছরের মার্লন ব্র্যান্ডো আর ১৯ বছরের মারিয়ার সেই দৃশ্যের পরিকল্পনা ঠাণ্ডা মাথাতেই করেছিলেন পরিচালক! তারা ধিক্কার জানিয়েছেন পরিচালককে।
বার্তোলুচ্চি সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শুটিংয়ের আগের দিন সকালে মার্লন ব্র্যান্ডো তাকে আইডিয়া দেন যে, ধর্ষণদৃশ্যের অনুপুঙ্খ বিবরণ যদি মারিয়াকে না জানানো যায়, তাহলে দৃশ্যটি অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে প্রতিপন্ন হবে। অভিনেত্রী নয়, একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবেই তারা পেতে চেয়েছিলেন মারিয়াকে। সেই মতোই তোলা হয় দৃশ্য।
এই দৃশ্যে ব্র্যান্ডো স্ব-উদ্ভাবিত কিছু নিপীড়নকৌশল প্রয়োগ করেন, যা মারিয়া ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। ফলে যা ঘটার তা-ই ঘটে, ‘ধর্ষিতা’ মারিয়া-র ক্ষোভ-রাগ-বিস্ফোরণ— সবই 'স্বাভাবিক'ভাবে ফুটে ওঠে ক্যামেরায়।
সিনেমাটির গল্প মধ্যবয়সী এক পুরুষ ও এক তরুণীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। স্ত্রীর আত্মহত্যার পর মার্কিন এই হোটেল ব্যবসায়ী ফরাসি তরুণীটির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান। তবে তারা পরস্পরের পরিচয় ও তথ্যাদি গোপন রাখেন। একদিন ওই ব্যক্তি তরুণীটিকে বাড়ি ফেলে চলে যান। পরে তাদের হঠাৎ দেখা হলে ট্যাংগো নামের এক পানশালায় গিয়ে বসেন। লোকটি তখন মেয়েটিকে নিজের পরিচয় ও জীবনের নানা কথা জানিয়ে বলেন, তিনি মেয়েটির প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু মেয়েটি তার সঙ্গে আর সম্পর্কে জড়াতে চাননি। কিন্তু লোকটি মরিয়া হয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে একপর্যায়ে ওই তরুণীর বাড়িতে তারই গুলিতে লোকটির মৃত্যু হয়। মেয়েটি তখন পুলিশের সামনে বলার জন্য মহড়া দিতে থাকেন, এই লোককে তিনি চেনেন না। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তিনি নিজেকে বাঁচাতে এমনটা করেছেন।
যৌন সব দৃশ্যের জন্য ছবিটি ওই সময় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। অস্কারের জন্য মনোনীত হন ইতালীয় পরিচালক বের্নার্দো বেরতোলুসি ও নায়ক মার্লোন ব্র্যান্ডো। ছবিটিতে অভিনয়ের সময় মার্লোনের বয়স ছিল ৪৮ বছর। পরিচিতি পান নায়িকা মারিয়া স্নাইদারও। মাত্র ১৯ বছরের তরুণী হিসেবে তিনি ওই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
২০০৭ সালে মারিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, চলচ্চিত্রে তরুণীটির বাড়িতে গিয়ে লোকটির যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার বিষয়টি মূল চিত্রনাট্যে ছিল না। শুটিংয়ের সকালে হঠাৎ করেই পরিচালক ও নায়ক মিলে দৃশ্যটি যুক্ত করেন। শুটিংয়ের ঠিক আগমুহূর্তে তাকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি তখন খুব রেগে যান। রেগে গিয়ে নিজের এজেন্ট ও আইনজীবীকে ডাকতে চান। তখন নায়ক মার্লোন ব্র্যান্ডো তাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা শুধুই একটা চলচ্চিত্রের দৃশ্য।’ কিন্তু তিনি যখন এই দৃশ্যটি করতে যান, তখন নিজেকে তার খুবই লাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। ভীষণ কেঁদেছিলেন তিনি। তার ভাষায়, ‘সত্যি বলতে, আমার মনে হচ্ছিল, আমি ধর্ষণের শিকার হয়েছি; নায়ক ও পরিচালকের দ্বারা।’
এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পরিচালক যা-ই বলুন না কেন, মারিয়ার জীবনে ঘটনাটা এত সহজে ভোলার ছিল না। তিনি হতাশ বোধ করতেন। তার এক আত্মীয় জানিয়েছিলেন, তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। রোগে ভুগে ২০১১ সালে মারা যান মারিয়া। সূত্র: টেলিগ্রাফ, এবিসি নিউজ।
(এসকে/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬)
Comments
Post a Comment