শাহনেওয়াজ খান
শুক্রবার আমার ডে-অফ থাকায় বাসায় সাধারণত পত্রিকা-টেলিভিশন থেকে দূরেই থাকি। সংবাদমাধ্যমে হওয়ায় একদিন প্রচ্ছন্ন ছুটি কাটাই আর কি! স্বভাবতই এই গত শুক্রবারও একই অবস্থা ছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার অবশ্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক নিরাপত্তারক্ষীর হাতে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লাঞ্ছিত এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে হামলার ঘটনা জেনেছি। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ঘটনা অনেকটা শান্ত হয়ে আসে। কিন্তু পরদিন শুনলাম সেখানে নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল! বিবৃতি দেওয়া বাকি ছিল নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের! কারণ ভয়াবহ জঙ্গি হামলা! হামলার ধরন একেবারে নাৎসি বাহিনীর চেয়েও ভয়ঙ্কর!
গণমাধ্যমকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতেই কর্পোরেট দুনিয়ার ব্যবসায়ীদের এ খাতে বিনিয়োগ। বিশ্বজুড়েই এ অবস্থা। কখনো তা প্রকাশ্যে আসে নগ্নভাবে কখনো বা চুপিসারে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনাকে বিশাল আকারে রং মাখিয়ে প্রচার করেছে একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মিডিয়াপল্লী (একযোগে অনলাইন নিউজপোর্টাল, দুইটি পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও)। এটা অবশ্য আমাদের দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এই পত্রিকাগুলো শুরু থেকেই এ ধরনের খবর পরিবেশনে অভ্যস্ত। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকাও এ ধরনের খবর ছাপে। তারাও একটি কর্পোরেট গ্রুপের মালিকানাধীন। বলা যায়, আমাদের দেশের পাঠকরা এগুলো বেশ ভালোই বুঝে। দেখতে দেখতে অভ্যস্ত তো! তবে এবারের ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক এই কারণে যে, নিজেদের বিপক্ষে গেলেই অন্যকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা। ঠিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মতো। নিজেদের বিপক্ষে গেলে বা স্বার্থের কারণে যে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে এই তকমা দিয়ে ঘায়েল।
অ্যাডল্ফ হিটলার তার ‘মাইন ক্যাম্ফ’ বইয়ে স্পষ্টভাবেই বলেছেন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী ও রাজনীতিকদের কথা বলার হাতিয়ার। তারা এটি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। মূলত তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে তাদেরই অর্থে পরিচালিত হয় সংবাদমাধ্যমগুলো। বেশিরভাগ মিডিয়ার ক্ষেত্রেই এই কথাগুলো স্পষ্টরূপে দেখতে পাওয়া যায়। তবে এর মাঝেই অনেক সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন পেশাদারিত্বের সাথে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাই নিরাশ হতে চাই না।
Comments
Post a Comment