Skip to main content

জামালপুরে একদিন

শাহনেওয়াজ খান



অনেক করে খোঁজ-খবর নিয়ে বেশ খানিকটা আশাহত হতে হল, নাহ্ দেখার মতো কিছুই নেই জামালপুরে। না কোনো প্রাচীন স্থাপত্য, না নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অথবা বিখ্যাত কোনো স্থান। তারপরও যেতে তো হবেই। জেলা তো আর বাদ রাখা চলবে না। অনেক ভ্রমণের মতো এবারও সঙ্গী সুজন ভাই।

কিভাবে যাব জিজ্ঞাসা করতেই সবার উত্তর ‘তিস্তা’। খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিস্তা সোমবার বন্ধ থাকে। কিন্তু আমরা যে যাব সোমবারে! রাতের ট্রেনে গেলে পৌঁছাবে মাঝরাতে। এত রাতে যাব কোথায়? সকালেও তিস্তা ছাড়া আর ট্রেন নেই, তাই বাসই ভরসা। জামালপুরের বাসগুলো আবার লোকাল, তাই ‘বুদ্ধি’ খাটিয়ে ময়মনসিংহের বাসে উঠলাম। সেখান থেকে সিএনজিতে করে যাব জামালপুর। মহাখালী থেকে বাস ছাড়ল সকাল ৭টায়। জ্যাম-বৃষ্টি ও ড্রাইভারের হেলে-দুলে চালানো- এই তিন মিলে পৌঁছালাম ১১টায়। এরপর আরো দেড় ঘণ্টারও বেশি লাগবে। মানে সরাসরি জামালপুরের বাসে গেলেই ভালো হত! বুদ্ধি ও ভাগ্য- দুই-ই প্রতিকূলে! হালকা নাস্তা (কেক) করে সিএনজি অটোরিক্সায় উঠতে গেলাম। ভাড়া জিজ্ঞাসা করতেই বেশ লজ্জামিশ্রিত হাসি নিয়ে চালক বলল, ‘৩০ টাকা’। উঠার পরেই সুজন ভাই রাস্তার পাশে দূরত্ব লেখা দেখে বলল, ‘জামালপুর ৫৪ কিলোমিটার।’ তার মানে কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা করে হলেও ভাড়া ১০০ টাকার বেশি! যাই হোক শেষ পর্যন্ত নেমে বুঝলাম ভাড়া ১৩০ টাকা। পৌঁছালাম প্রায় দেড়টার দিকে অর্থাৎ ভাড়া ও সময়- দুই দিকেই ধরা! এটা অবশ্য বেশি সমস্যায় ফেলতে পারেনি মিঠু আহমেদ ভাইয়ের কল্যাণে। আমাদের পত্রিকার জামালপুর প্রতিনিধি মিঠু ভাই তার মোটর সাইকেলে চড়িয়ে খুব অল্প সময়েই সব জায়গা ঘোরালেন।

ব্রক্ষ্মপুত্র নদ দেখে দুঃখ হল- নদী না খাল এটা বুঝতেই বেশ সময় লেগেছে! দুই পাশে চরের মাঝ দিয়ে সরু হয়ে বয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। তবে নির্মল বাতাস ও নির্জলা পানি- ক্লান্তি ও দুঃখ সবই দূর করে দেয়। জমিখেকো ও বালুখেকোদের কার্যক্রম দেখতে দেখতেই মিঠু ভাই বললেন, এটা কিন্তু শেরপুর। অর্থাৎ নদী ও ওপার শেরপুর জেলায় অবস্থিত। আমরা চা খেলাম শেরপুরের এক দোকানে। জামালপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী দেখতে দেখতে মনে হল শহরটা জামালপুরে না শেরপুরে। সদরের পাশেই আরেক জেলা- বেশ অদ্ভুতই বটে। রাতে নদীর উপর দিয়ে কাঠে সাঁকো পার হয়ে দোকান থেকে চিপস কিনে খেলাম। শুনলাম ওই দোকানও শেরপুরে। লুইস ভিলেজ রিসোর্ট এ্যান্ড পার্ক, বাণিজ্য মেলা, সঙ দর্শন, দয়াময়ী মন্দির ও শাহ জামালের (রহ.) মাজার ঘুরার অভিজ্ঞতাও মন্দ না। মন্দ ভাগ্য বলতে থাকার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের খাবার। এই দুটোর মান নিয়ে কথা না বলাই ভালো। আসার সময় ট্রেন ভ্রমণটাও মন্দ হল না (বেশিরভাগ সময় তো ঘুমিয়েই কাটালাম)।

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স