Skip to main content

বাজেটের আয়নায় দেখি মুখ

শাহনেওয়াজ খান



চার লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থের হিসাব। আমার মত ছোট মাথার লোকজনের জন্য মহা গোলমেলে বিষয়। বিশাল অঙ্কের এই বিষয় থেকে নিজেকে দূরেই রাখার চেষ্টা করি বেশিরভাগ সময় (আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ নেই!)। কিন্তু বাস্তব জীবনে চলতে গিয়ে কেন যেন ওই লাখ লাখ হাজার হাজার কোটি টাকার বিষয়গুলো আমাদের এক-দশ-শত টাকার হিসাবেও ঢুকে যায়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দূরে থাকতে চাইলেও বাজেটের বিষয়ে কিছুটা হলেও খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। অবশ্য তা অনেকটা ভীত নজরে, কারণ বেশি বুঝলেই সর্বনাশ! মালের প্রত্যাশিত মালে তো ঘাটতি রাখা যাবে না!

আগে থেকেই অতিরিক্ত করারোপ ও কর্পোরেট সংস্কৃতি নিয়ে আমি শঙ্কিত। পুঁজিবাদের এই বিষয়টি ব্যক্তি, রাষ্ট্র, সমাজ- সব কিছুকে ধ্বংসের চরম সীমায় নিয়ে ‍যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এই সংস্কৃতিটা যথেষ্ট ভীতিকর রূপ ধারণ করেছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেও এর নগ্ন নমুনা দেখা গেল। ভীতিটা তাই আগের চেয়ে বেড়েছে বৈকি। অতিরিক্ত করের বোঝায় জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠবে তা বলা বাহুল্য। করবাবদ জনগণের পরিশ্রমের টাকা নিতে নিতে হয়তবা এ রকম সময়ও আসতে পারে যখন রাষ্ট্রের সব নাগরিকের কষ্টার্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। আর বর্তমানে টিসিবির চাল-ডাল বিক্রির ট্রাকের মতো ট্রাক রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা অর্থের আনুপাতিক হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, পোশাক, বইপত্র সবই লাইন ধরে নিতে হবে। বাড়ির কর্তারা অবশ্য এক্ষেত্রে সংসারের টানাটানি থেকে একটু রেহাই পাবেন! যাক বাবা, এবার লাইন ধরে কাড়াকাড়ি চলুক, চাহিদার লিস্ট সরকারকেই ধরিয়ে দাও!

সম্প্রতি ভ্যাট-ট্যাক্স-আবগারি শুল্কের উন্নয়নের মাঝে আবুল মাল আবিষ্কার করলেন ধনী ও গরিবের নতুন সীমা। লাখপতি মানে ধনী আর কোটিপতি মানে মিসকীন! বছরে এক লাখ জমাতে পারলে সে ধনী; এ কারণে ব্যাংকে রাখা তার আমানতের ওপর ৮০০ টাকা আবগারী শুল্ক কাটা হবে। আর বছরে কোটি টাকা জমাতে পারলে সে মিসকীন; এ কারণে তার আমানত থেকে আবগারী শুল্ক কাটা হবে মাত্র ২৫০০ টাকা। (ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে থাকলে আবগারি শুল্ক ৮০০ টাকা দিতে হবে। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকার মধ্যে থাকলে ১২ হাজার টাকা। ৫ কোটির ওপর থাকলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে।) অথচ লাখ টাকার সাথে তুলনা করলে কোটি টাকার আবগারি শুল্ক হওয়ার কথা ছিল ৮০ হাজার টাকা! দেশে মন্ত্রীদের মাসিক বেতন লাখ টাকার উপরে। এছাড়া বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা ও তহবিলের পরিমাণ হিসাব করলে তা আরো অনেক বেশি। এ হিসাবে আবুল মালদের ‘কোটিপতি মিসকীন’ হতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। আবগারি শুল্ক তাই উনাদের কিছুটা কম হওয়াই শ্রেয়!

আবগারি শুল্কের চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হলো ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো। পণ্যের উৎপাদন, বিপনন, আমদানি সবকিছুর উপর ভ্যাট ধরায় একই পণ্যের উপর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সবগুলোর ট্যাক্স বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সব ক্ষেত্রেই নানাভাবে করের মাত্রা বাড়ানোই হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সুবিধা ভোগের মাত্রা বাড়ছে না। মরার উপর খরার ঘাঁয়ের মত আছে ঘুষ। অতিরিক্ত করারোপের যাতায় পিষ্ট জনতা যথারীতি সরকারি বিভাগগুলোতে প্রতি পদক্ষেপে ঘুষ দিয়েই যাচ্ছেন। আমার মনে হয়, এসব কর ও ঘুষকে একসূত্রে গাঁথা যায়। হয় জনগণের করের টাকায় দেওয়া সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাকে বৈধতা দিতে হবে, অথবা ঘুষকে বৈধতা দিতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরি নেওয়া ও চাকরি পেয়ে নিয়মিত ঘুষ আদায় করা একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে তাই এটাকে বৈধতা দেওয়াই বোধ হয় সহজ উপায়! এক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উঠিয়ে দিয়ে ঘুষ প্রথার আনুষ্ঠানিক প্রবর্তন করা যায়। ক্ষেত্রভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবে সরকার। মাস শেষে এই ঘুষের অঙ্কই তাদের বেতন-ভাতা আকারে দাঁড়াবে। এর ফলে জনগণকে অতিরিক্ত কর দিতে হবে না।

বৈদেশিক ঋণ মেটাতে গিয়ে জনগণের উপর অতিরিক্ত করারোপ করে অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার গ্রিস। রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের খায়েশ ও উচ্চভিলাষিতা মেটাতে গিয়ে একই পরিণতি কি হবে বাংলাদেশের? দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা টাকার ঘাটতিও অতিরিক্ত করের বোঝা মাথায় নিয়ে পুষিয়ে দিতে হচ্ছে জনগণকেই। যে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী নিয়মিত নানাবিধ কর পরিশোধ আসছে তাদের উপরই বাড়ছে করের বোঝা। উচ্চশ্রেণীর যে লোকজন করের ক্ষেত্রে কারচুপি করছে তারা যথারীতি বাইরেই রয়ে যাচ্ছে। ভয়টা তাই থাকছেই। হয়ত গ্রিসের চেয়েও সংকটাপন্ন অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে আমাদের। সময়ই এটা বলে দেবে। তবে এক্ষেত্রে রাজনীতিকদের একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। জনতার স্বার্থ ভুলুণ্ঠিত করে ক্ষমতা চালানো রাজনীতিকদের বয়কটের একটা প্রক্রিয়া কিন্তু ধীরে হলেও বিশ্বব্যাপী শুরু হয়ে গেছে। গ্রিসের নির্বাচনেই নবীন দল সিরিজা পার্টি ও নতুন নেতা সিপ্রাসের বিজয় এর প্রত্যক্ষ উদাহরণ। একইসঙ্গে ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়াও গতানুগতিক রাজনীতিকদের ভাবনার বিষয়। পাশবর্তী ভারতে কেজরিওয়াল ও পাকিস্তানে ইমরান খানের উত্থানও কি এর উদাহরণ নয়? সম্প্রতি জনগণকে ‘পুতুল খেলা’য় নামিয়ে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো কিছুটা আড়ালে রাখতে পেরেছিল প্রশাসন। কিন্তু ওইসব অন্ধ, বোবা, কালা (বধির) মূর্তি নিয়ে কতদিন আর খেলা চলে? মানুষ বা তার বিবেক কিন্তু মূর্তির মতো ওরকম অথর্ব বস্তু নয়।

Comments

Popular posts from this blog

Never promoted terror, says Naik

News Express Desk : Accused of giving hate speeches, inciting acts of terror and disrespecting other religions, Dr. Naik said he had a right to express his view, given to him by the Constitution. He said he believed his religion was the best because, “the Koran says it. No other religious text or scripture claims this fact.” About inciting acts of terror, he challenged the media “to find out any instance where I have promoted terrorism or praised an act of terrorism.” In one of the clips floated on social media, Dr. Naik is seen supporting Al-Qaeda founder Osama bin Laden. He claimed that this clip was doctored and being used out of context. He said he was “neither a saint, nor a terrorist for me.” Preacher Zakir Naik on Friday at a small banquet hall in Mazgaon, addressed media persons via Skype: “My statements were taken out of context; they were half sentences, and were doctored. I am a messenger of peace. It is condemnable for any human, whether Muslim or non-Muslim, to attac...

এখনো চলছে রোহিঙ্গা নিধন

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এমনকি ২৫ আগস্টের আগে থেকেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করলেও এখন নিধনযজ্ঞ থামেনি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এরআরডব্লিউ। সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার আলামত পেয়েছেন তারা। স্থানীয় সময় গত রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫৪টি গ্রাম। এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের পর সংস্থাটি জানায়, ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মিয়া...

ফিলিস্তিনের ‘স্পাইডারম্যান’

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ১২ বছরের এক শিশুর কাজকারবারও এইটুকুন হওয়ার কথা। কিন্তু ফিলিস্তিনের পুঁচকে বালক মোহাম্মদ আল শেখের কাজকারবার দেখে ভিরমি লেগে যাবে অনেকের। এই বয়সেই ও নিজের শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে নানা কসরত দেখাতে পারে। তাক লাগানোর মতো সেসব কসরত। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার চার ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ও ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের মোহাম্মদ আল শেখ অসম্ভব সব শারীরিক কসরত দেখাতে পারে। নিজের পায়ের পাতা উল্টো দিক দ িয়ে নিয়ে এসে কাঁধের ওপর নিতে পারে সে। নিজের শরীরকে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দিতে পারে। এ ছাড়া উঠের পিঠে উঠে ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো লাফাতেও পারে সে। আর এ কারণে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যাও দিয়েছে। ওই এলাকায় এখন সে তারকা। তবে এই তারকাখ্যাতি পেয়ে ক্ষান্ত নয় মোহাম্মদ, এখন সবাইকে তাক লাগানো শারীরিক কসরত দেখিয়ে নিজের নামটি সে লিখে নিতে চায় গিনেস বুকের পাতায়। ২০১৪ সালে হাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়। এ সময় প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকে মোহাম্মদের। এই যুদ্ধাবস্থার মাঝেও লেব...