নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে
সেনাবাহিনী এতটাই বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে যে, তাদের ধর্ষণ থেকে রেহাই মিলছে না শিশুদেরও।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আগেই বলেছে, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে
ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনারা। সেই অস্ত্র যে কতটা ভয়াবহ আকারে ব্যবহার করা হচ্ছে
তারই উদাহরণ ১০ বছরেরও কম বয়সী বালিকাদের ধর্ষণ। আজ বুধবার দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে
এই ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে বিতারিত
হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিতা বালিকাদের কক্সবাজারের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে
চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) নামে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী
চিকিৎসক দলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা তরুণীদের অধিকাংশই যৌন
নির্যাতনের শিকার। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, কক্সবাজারের কুতুপালং সীমান্তে একটি আলাদা
চিকিৎসাকেন্দ্রে খোলা হয়েছে শুধু যৌন নির্যাতনের শিকারদের জন্য।
এমএসএফ’র এক মুখপাত্র দ্য গার্ডিয়ানকে
বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য থেকে আসা মেয়েদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ৫০ শতাংশই
ধর্ষণের শিকার। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ১৮-এর নিচে। এমনকি একজনের বয়স ৯ এবং অন্যান্য
কয়েকজনের বয়স ১০-এর নিচে।’
তবে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার
ভয়ে যৌন নির্য়াতনের শিকার অনেক নারীই চিকিৎসা নিতে আসছেন না বলে জানান চিকিৎসকরা। এমএসএফ’র কর্মী আর্লিন পিফেইল
বলেন, ‘লজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে অনেক নারী ও মেয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন না।’
গত সপ্তাহে চিকিৎসা নিতে
আসা মেয়েদের মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক বালিকাও ছিল বলে জানান তিনি। ওই বালিকাকে ধর্ষণ করা
হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জাতিসংঘও বলছে, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গা নারীদের
ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করছে। এর মধ্যে অনেক শিশু আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরে চিকিৎসা
সেবায় নিয়োজিত থাকা এক নারী কর্মী গার্ডিয়ানকে বলেন, নির্যাতিতারা জানিয়েছেন প্রথমে
গ্রামের সব নারীকে একত্রিত করে মিয়ানমারের সেনারা। এরপর সেখান থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি
সুন্দরীদের আলাদা স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। বাকিদের সবার সামনেই আলাদাভাবে বা গণধর্ষণ
করে সেনা সদস্যরা।
ওই চিকিৎসাকর্মী জানান,
ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে অনেকেই ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী। সম্প্রতি ১০ বছরের কম বয়সী এক
মেয়েকে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছেন যাকে তিনজন সেনা সদস্য মিলে ধর্ষণ করে। অনেক
নারীই গণধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন বলেও জানান তিনি।
মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,
শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকা যৌন নির্যাতনের শিকার অনেক নারীই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
তাদের এই সমস্যা ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন
তারা।
গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার
দেওয়া ২৭ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী জানান, ২৫ আগস্টের পরপরই তাদের এলাকা বুথিডংয়ে
নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনারা। প্রথমে তার স্বামী ও বাবাকে হত্যা করে সেনা সদস্যরা।
এরপর তাকে ও তার ১৪ বছর বয়সী ছোটবোনকে ধর্ষণ করে তারা।
ওই নারী বলেন, ‘সেনা সদস্যরা
পুরুষদের একপাশে দাঁড় করায় এবং সব নারীকে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেনারা এরপর কয়েকজন মেয়ে
ও নারীকে আলাদা করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তখন আমার
ছোটবোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্না করছিলাম। কিন্তু সেনা সদস্যরা আমার কথা শোনেনি। তারা
অনেক নারীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। তারা যখন তাদের ফেলে চলে যায় তখন আমি অনেক দেহের
সঙ্গে আমার ছোটবোনকেও পড়ে থাকতে দেখি। আমি যখন তার কাছে যাই তখন বুঝতে পারছিলাম না
সে জীবিত না মৃত। তবে সে শ্বাস নিচ্ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার
(ছোটবোন) শরীর থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই আমি তাকে একটি ছোট নদীতে নিয়ে ধুই।
তারপর আমি তাকে কাঁধে করে একটি ছোট চিকিৎসা কেন্দ্রে (রাখাইনে) নিয়ে যাই এবং কিছু ওষুধ
নেই।’ বাংলাদেশে আসার পর তিনি
তার ছোটবোনকে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে নেননি বলেও জানান।
ওই নারী বলেন, তার বোন
তাকে জানিয়েছে যে তাকে দুই সেনা সদস্য ও এক বৌদ্ধ বেসামরিক নাগরিক মিলে ধর্ষণ করে।
এমএসএফ’র কর্মী পিফেইল বলেন,
‘আমি অনেক নির্যাতিতাকে পেয়েছি যারা বাংলাদেশে আসার পর এখানকার শিবিরে যে চিকিৎসাকেন্দ্র
রয়েছে সে সম্পর্কে জানতেন না। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি তখন তারা হৃদয়বিদারক ঘটনা
শোনায় ও নতুন জামা চায়। কারণ, বেশিরভাগ নারীই ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সেই জামা পরেই
বাংলাদেশে চলে এসেছেন।’
(এসকে/অক্টোবর ২৫, ২০১৭)
Comments
Post a Comment