Skip to main content

‘রোহিঙ্গা’ শব্দ এড়ালেন পোপ




নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মিয়ানমার সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস। বৈঠকের পর দেওয়া বক্তব্যে আগের দিনের মত এবারো ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি তিনি। এমনকি সরাসরি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো কথাও বলেননি পোপ।

রয়টার্স ও সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার নেইপিদোতে সু চির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের পর বক্তব্য দেন পোপ ফ্রান্সিস। এ সময় তিনি মানবাধিকার রক্ষা ও সব ধর্ম-গোত্রের লোকদের প্রতি সমান আচরণের আহ্বান জানান।

পোপ বলেন, “শান্তি স্থাপন ও জাতীয় ঐক্য গঠন তখনই সম্ভব যখন বিচার সমুন্নত এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান দেখানো হয়।” তিনি আরো বলেন, “ধর্মীয় ভিত্তিতে কখনোই রাষ্ট্রে বিভাজন সৃষ্টি করা উচিত নয়। জাতিকে সুগঠিত করতে হলে অবশ্যই ঐক্য, ক্ষমা, সহনশীলতা ও বিজ্ঞতার প্রয়োজন।” এরপর সু চি তার বক্তব্যে রাখাইনে বিভাজন রেখা না টেনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রথম দিনের মত এদিনও পোপ রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এমনকি সফরের আগে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা জানালেও বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি পোপ।

এই সফরের আগে থেকেই পোপকে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন মিয়ানমারের ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা। দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও পোপকে একই আহ্বান জানানো হয়। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করা হয় না। তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে মিয়ানমার সরকার।

দেশটির রাখাইন রাজ্যে গত আগস্টে সেনাবাহিনীর শুরু করা অভিযানে এ পর্যন্ত সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ- এমন কোনো অপরাধ নেই যা করছে না সেনা সদস্যরা। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে জাতিগত নিধন অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছে।

পোপকে বাধ্য করে বৈঠক

চীন থেকে ফিরে গত সোমবারই পোপের সঙ্গে আকস্মিক সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। ১৫ মিনিটের ওই একান্ত সাক্ষাৎকারে কি কথা হয়েছে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ভ্যাটিকান। তবে বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে, সাক্ষাতে রাখাইনে ধর্মীয় বিদ্বেষের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করেছেন হ্লাইং।

এদিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের অফিসিয়াল সংবাদ মাধ্যম ক্রাক্সনাউ জানিয়েছে, আগামী ৩০ নভেম্বর মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সূচি নির্ধারিত ছিল পোপের। কিন্তু পোপ মিয়ানমারের পৌঁছার পরই কর্তৃপক্ষ জানায়, তার সঙ্গে বৈঠক করবেন সেনাপ্রধান হ্লাইং। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা ভ্রমণের পর বিশ্রামের ওই সময়টাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই বৈঠকে অংশ নেন পোপ। বৈঠকে বসার ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রধান ক্যাথলিক ধর্মযাজক কার্ডিনাল চার্লস মং বো পোপকে অনুরোধ করেন।

ক্রাক্সনাউ’কে মং বো বলেন, তাদের আশঙ্কা ছিল আকস্মিক ওই বৈঠকে যদি পোপ অংশ না নেন তাহলে মিয়ানমারে অবস্থানরত খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করবে দেশটির সেনাবাহিনী। এমনকি উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের ব্যাপারেও ভয় রয়েছে তাদের। রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে রেখে তারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

(এসকে/ নভেম্বর ২৮, ২০১৭)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স