Skip to main content

বেশিরভাগ রোহিঙ্গারই ফেরার তথ্যপ্রমাণ নেই




নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: রাখাইনের অধিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে যে সমঝোতা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই করে তাদের ফেরত নেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও এতে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকের কাছেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। 

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুতুপালং শিবিরের ফাতেমা বেগম এসেছেন খালি হাতে। তার ভাষ্যে প্রাণ বাঁচানোই ছিল তাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য। “কাগজপত্র ছিল কিন্তু সব পুড়ে গেছে। আমরা জীবন নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে এসেছি। আমরা অত্যাচার, জুলুম সহ্য করতে না পেরেই চলে এসেছি বাবা...” বলেন ফাতেমা বেগম।

ফেরত যাওয়ার প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের সবারই মোটামুটি একই রকম বক্তব্য। তারা চান রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, সমান সুযোগ ও নাগরিক অধিকার এবং স্থায়ী শান্তি। এসব নিশ্চিত না হলে তারা আর রাখাইনে ফিরতে চান না।

ফাতেমা বেগম বলছিলেন তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিরতে পারবেন মিয়ানমারের অধিবাসী, যারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী, অভিভাবকহীন এবং আদালতে স্বীকৃত বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশু।

ফিরতে হলে সবাইকে মিয়ানমারের অধিবাসী হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। এজন্য লাগবে নাগরিক পরিচয়পত্র, জাতীয় নিবন্ধন। আর আবাসস্থলের প্রমাণ করতে লাগবে বসবাসের ঠিকানা, ব্যবসা বা জমির দলিল, স্কুলের পরিচয়পত্র, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ইস্যুকরা কাগজপত্র।

রাখাইনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নুরুল আমিন এখন বালুখালি ক্যাম্পের বাসিন্দা। এসেছেন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। সঙ্গে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে। নুরুল আমিন আসার সময় হাতের কাছে থাকা সব কাগজপত্রই এনেছেন। যার মধ্যে আছে জমির দলিলপত্র, ব্যবসার লাইসেন্স এবং রাখাইনে কর্তৃপক্ষের দেওয়া সাময়িক সনদ।

২০১০ সালে তারা ভোট দিয়েছিল এমন একটি কার্ডও আছে তার সঙ্গে। স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের ইস্যু করা একটি পরিচয়পত্র আছে নুরুল আমিনের। রাখাইনে ২০ একর জমিতে মাছ, ধান ও বনায়নের সমন্বিত প্রকল্প ছিল নুরুল আমিনের। সেই খামারের কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে। নুরুল আমিন যেসব তথ্য প্রমাণ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন রাখাইনের অধিবাসী প্রমাণে এটি যথেষ্ট। নিজ দেশে ফেরার প্রশ্নে নুরুল আমিন জানান তাদেরও কিছু শর্ত আছে।

“প্রথম শর্ত হলো আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো অধিকার দিতে হবে। আর আমার যে জমিজমা, ব্যাবসা-প্রজেক্ট ছিল সেগুলো ফেরত দিতে হবে। আমরা চলে যাব। আমরা আমাদের দেশেই থাকতে চাই”, বলেন তিনি।

জানা যাচ্ছে, ১৯৯২ সালের চুক্তির আলোকে এই অ্যারেঞ্জমেন্ট বা ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু এরকম ব্যবস্থার মাধ্যমে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমন লোকজন রয়েছে যারা একাধিকবার দু’দেশে যাওয়া আসা করেছেন। আশির কাছাকাছি বয়স হোসেন শরিফ এই নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তার কাছে বাড়ির নম্বর প্লেটসহ দলিলপত্র ছবি সবই আছে। সেই সঙ্গে আছে দু’দেশে আসা যাওয়ার দুঃসহ স্মৃতি।

১৯৭৮ সালে তিন সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি। বছরখানেক পর ফেরত গিয়ে আবার ১৯৯১ সালে আসতে হয়েছে পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিয়ে। ওই দফায় বাংলাদেশে ছিলেন তিন বছর। এবার নয় সন্তান আর নাতি-নাতনি নিয়ে আবার বাংলাদেশে। এখন আবার ফেরত যাওয়ার প্রশ্নে হতাশ হোসেন শরীফ, “আমরা আর কত কষ্ট করব। আর কতবার দুঃখ সহ্য করব। আর ভাল লাগে না। মনে হয় মরলে এখানেই মরব। আমাদের দেশ আমাদের দিলে, রোহিঙ্গা হিসেবে মেনে নিলে যাব, নইলে যাব না।”

দুই দেশের মধ্যেকার দলিলে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে যুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর জানাচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তারা এই দলিলের কপি পায়নি।

তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সংস্থাটির পক্ষে মোহাম্মেদ আবু আসকের বলেন, “তারা দেশহীন শরণার্থী। তারা কোন দেশের সেটি প্রমাণ করার মতো তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে নেই। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের স্বাক্ষরিত অ্যারেঞ্জমেন্টের বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমরা অফিসিয়ালি এটি পাইনি, কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই যে আমরা চাচ্ছি টেকসই সমাধান।”

আসকের বলেন তিনি রোহিঙ্গা শিবিরে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন যারা তিনবার চারবারও বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আবার ফেরত গিয়েছেন। “তাদের নাগরিকত্বসহ মূল সমস্যার সমাধান আমরা চাই। এখানে অনেকেই কয়েক দফা এসেছে আবার ফেরত গিয়েছে। আমরা চাই না বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক,” বলেন আবু আসকের।

এই পরিস্থিতিতে সব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যে জটিল প্রক্রিয়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে শর্ত যাই থাকুক এই ব্যবস্থা হলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সূচনামাত্র।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই একটি লোকের যখন ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তাকে যখন বলপূর্বক বিতাড়িত করে, তখন তার কাগজপত্র নেওয়ার কোনো সময় সুযোগ থাকে না। যাদের আছে তাদের আছে। আর বাকিদের ব্যাপারে ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়গুলো ভেবেচিন্তে দ্বিতীয় দফা, তৃতীয় দফা আলাপ-আলোচনা করবে।”

(এসকে/ডিসেম্বর ০১, ২০১৭)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স