Skip to main content

ইসরায়েলের গুপ্তহত্যার গোমর ফাঁস

 
 
 
নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : নিকট অতীতে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গুপ্তহত্যা ঘটিয়েছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ এবং গত শতকে ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের কেজিবি। ইসরায়েলের গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের ফাতাহ ও হামাসের নেতা-কর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, বন্ধুরাষ্ট্রের যেসব নীতিনির্ধারককে ইসরায়েল নিজের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করেছে, তারাও ইসরায়েলের নির্মম টার্গেট কিলিং নীতির শিকার হয়েছেন। মিসর, ইরাকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সামরিক সহায়তা করা ঠেকাতে জার্মানি, উরুগুয়ে, কানাডার নাগরিকদেরও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা হত্যা করেছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের ইয়েদিওত আহারনত পত্রিকার ইন্টেলিজেন্স করেসপনডেন্ট রনেন বার্গম্যান তার ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট: দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব ইসরায়েলস টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশনস’ বইয়ে ইসরায়েলের গত ৭০ বছরে অবৈধ দখলদারত্ব টিকিয়ে রাখার পথে যেসব গুপ্ত ও টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করেছে, তার বিবরণ দিয়েছেন। এই বইয়ে বার্গম্যান জানান, প্রতিষ্ঠার পর ২ হাজার ৭০০ জনকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হত্যা করেছে। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। এর মধ্যে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাতও রয়েছেন। তাকে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় বলে বার্গম্যান উল্লেখ করেছেন।

এই বই লেখার জন্য বার্গম্যান ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক হাজারের বেশি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। বই প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বাধার মুখেও পড়েছেন। তাকে বলা হয়েছিল, এই ধরনের গবেষণা ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে বার্গম্যান থেমে যাননি। তিনি বইটি প্রকাশ করেছেন এবং ইসরায়েলের টার্গেট কিলিংয়ের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন।

যত দূর জানা যায়, ১৯৫৬ সালের মিসরের লে. কর্নেল মোস্তফা হাফেজকে পার্সেল বোমা পাঠিয়ে হত্যা করে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। মোস্তফা হাফেজ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বাছাই করতেন। গুপ্তহত্যার বড় ধরনের অভিযান ইসরায়েলিরা পরিচালনা করে ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। মিউনিখ অলিম্পিক ভিলেজে হামলা করে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের অ্যাথলেটদের জিম্মি করে। ইসরায়েলি কমান্ডোরা তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করলেও কাউকেই আটক করতে পারেনি।

পরে দীর্ঘ সময় নিয়ে ওই হামলায় অংশ নেওয়া সবাইকে বৈরুত, প্যারিস, অসলো ও যুক্তরাষ্ট্রে হত্যা করে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। এর মধ্যে বৈরুতে হামলা করে ১৯৭৩ সালের ৯ এপ্রিল। ওই সময় পিএলওর শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতাকে হত্যা করে তারা। ১৯৮৮ সালে তিউনিসে হত্যা করা হয় ফাতাহ আন্দোলনের নেতা আবু জিহাদকে। লিবিয়া থেকে সিরিয়ায় যাওয়ার পথে ১৯৯৫ সালের মাল্টার ডিপ্লোম্যাট হোটেলের সামনে ফাতিহ সাকিকিকে গুলি করে হত্যা করে মোসাদের সদস্যরা। ছদ্মনাম ড. ইব্রাহিম ধারণ করে বিভিন্ন দেশে আনাগোনা করতেন সাকিকি। কিন্তু মোসাদের গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে পারেননি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রাবিন নিহত হওয়ার পর হামাসের বোমা স্কোয়াডের সদস্য ইয়াহইয়া আয়েশের খোঁজে ছিল ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত। ১৯৯৬ সালে তাকে গাজায় হত্যা করা হয়। আয়েশকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বন্ধুর চাচা কামিল হামাদকে এক মিলিয়ন ডলার, ভুয়া ইসরায়েলি পাসপোর্ট ও মার্কিন ভিসা জোগাড় করে দেওয়া হয়। আয়েশকে হত্যার কিছুদিন পরেই চারটি আত্মঘাতী হামলা করে ৬০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস।

হামাস নেতা খালেদ মেশালকেও কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। একবার জর্ডানে তার ওপর বিষও প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত মেশাল বেঁচে যান। ইসরায়েলি বন্দিবিনিময়ের জটিল এক খেলায় ইসরায়েলিদের কাছ থেকে সেই বিষনিরোধক ওষুধ আনিয়ে মেশালের জীবন বাঁচানো হয়। খোদ মোসাদের প্রধান ড্যানি ইয়াটম ওই ওষুধ বহন করে নিয়ে যান আম্মানে। তবে ২০০৪ সালে হত্যা করা হয় খালেদ মেশালসহ অনেক হামাস নেতার তাত্ত্বিক গুরু শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে। ওপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ছাড়াও ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের বড় বড় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতার কমবেশি সবাই ইসরায়েলের গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

এ ছাড়া সাতজন ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করে মোসাদের গোয়েন্দারা। কারণ, ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ইরানের সামরিক শক্তি ভবিষ্যতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের টিকে থাকা ও সম্প্রসারণে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
বার্গম্যান প্রশ্ন তুলেছেন টার্গেট কিলিংয়ের নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি নিয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে, যে দেশে দাঁড়িয়ে বার্গম্যান নৈতিকতা ও আইনের প্রশ্ন তুলেছেন, সেই রাষ্ট্রেরই নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি নেই। কারণ, দখলদারদের কোনো আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি থাকে না। অবশ্য কেউ যদি রাজনৈতিক বাস্তববাদের কঠিন অনুসারী হয়ে থাকেন, তবে ভিন্ন কথা। কারণ, বাস্তববাদে রাষ্ট্রকে টিকে থাকার জন্য যা খুশি তা করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এবং রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য যা করবে, তা-ই যৌক্তিক।

ইসরায়েল কেন বেছে বেছে প্রতিপক্ষের লোকজনকে হত্যা করছে? কেনইবা হত্যার নীতি অবলম্বন করে টিকে থাকতে চাইছে? বার্গম্যানের বই থেকে আমরা জানতে পারি, ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রাচীন ‘তালমুদ’ উপদেশে অনুপ্রাণিত হয়েই বেছে বেছে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা হয়েছে। এবং হত্যাকারীদের মধ্যে অনুশোচনাও নেই। তালমুদ অনুসারে, ‘কেউ যদি তোমাকে হত্যা করতে আসে, তবে নিজেকে তৈরি করে প্রতিপক্ষকে হত্যা কর।’ কিন্তু এখানে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েল রাষ্ট্র নিজেই অবৈধ দখলদার এবং তারা অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে। তাই তাদের এই আত্মরক্ষার্থে তালমুদের বাণীর ব্যবহার এক বড় ধরনের ভাঁওতাবাজি। ইসরায়েলিদের কেউ হত্যা করতে আসেনি। বরং জায়নবাদীরা রক্তের সাগরে ভেলা ভাসিয়ে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি দখলের স্বপ্নে বিভোর, ফিলিস্তিনিরা তার প্রতিরোধ করতে চাইছে মাত্র। রক্ত কিন্তু উভয় পক্ষেই ঝরছে। এবং রক্ত ঝরার ক্ষেত্র বিস্তৃত হতে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্র আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া থেকে কত দূর বিস্তৃত হয়েছে, ইউরোপ ও আমেরিকা সেটা ভালোই টের পাচ্ছে।

বার্গম্যানের বই সেই রক্তঝরার ইতিহাসকেই সামনে তুলে এনেছে। ইসরায়েলের এই গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংয়ের কথা বিভিন্নভাবেই বলা হচ্ছিল। ইসরায়েল ও তার সমর্থকেরা কখনোই এটিকে স্বীকার করেনি; বরং ইসরায়েল ও তার সারথিরা ফিলিস্তিনের হামাস, ফাতাহ, পিএলওকে সন্ত্রাসবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়েনি। ইসরায়েলের গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে জায়েজ করার চেষ্টা করেন অনেকে। তবে কোনটি সন্ত্রাসবাদ আর কোনটি মুক্তি আন্দোলন, তা নির্ধারণ করতে হবে। এটি তেমন কঠিন কিছু নয়। এর জন্য দরকার বিবেক ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগ। বার্গম্যানের বই যে রাতারাতি ইসরায়েল ও তার সারথিদের অবস্থানের পরিবর্তন করবে, তা নয়। তবে ফিলিস্তিন নিয়ে অন্যদের ভাবনার পরিবর্তনে সহায়তা করবে।

বার্গম্যানের হিসাব মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ে থেকে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ও পরে তারা দুই হাজার ৩০০টি গুপ্তহত্যা চালিয়েছে। যে কোনো পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রের তুলনায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অনেক বেশি। বারাক ওবামা তার শাসনামলে এ ধরনের ৩৫৩টি হত্যার জন্য ড্রোন হামালার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তার নামে দেশটির কর্মকর্তা সব ধরনের আইনি বিষয়কে পদদলিত করেছিল। এখনি হুমকি নয়, এমন কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হত্যা করা ইসরাইলের আইন এবং যুদ্ধ নীতির পরিপন্থী। এরপরও তারা তাদের গুপ্তহত্যার মিশন চালিয়ে গিয়েছিল। বার্গম্যান লিখেছেন, ‘তারা আদতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে দাপ্তরিকভাবে অনুমোদন দিয়েছিল। একদিকে, গোয়েন্দা এবং জাতীয় নিরপত্তার সঙ্গে জড়িত সব কিছুকে অত্যন্ত গোপনীয় হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু অপরদিকে, সবাই আবার এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইত।’

তথাকথিত অনেক সাফল্যের পথে দেশটিকে এ জন্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি অন্যতম উদাহরণ খলিল আল-ওয়াজির হত্যাকাণ্ড। ইসরাইল অধ্যুষিত পশ্চিম তীর এবং গাজায় শুরু হওয়া প্রথম দিককার প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন ইয়াসির আরাফাতের প্রধান সামরিক কর্মকর্তা যিনি আবু জিহাদ নামে পরিচিত ছিলেন। ইসরাইলের কমান্ডোরা ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে তিউনিসে আবু জিহাদের বাড়ির শোবার ঘরে ঢুকে স্ত্রীর সামনে তার বুকে ৫২ বার গুলি চালিয়েছিল।

এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল ইন্তিফাদা আন্দোলনকে স্তিমিত করা। কিন্তু বার্গম্যান বলেন, এতে বিদেশের মাটিতে ইন্তিফাদা আন্দোলনের নেতৃত্ব দুর্বল হলেও ইসরাইল অধ্যুষিত এলাকায় এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, যা এ আন্দোলনের সত্যিকার পাটাতন তৈরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বইটিতে তিনি ইসরাইলের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এখন তারা (ইসরাইল) বিশ্বাস করে আবু জিহাদ বেঁচে থাকলে শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত।

বার্গম্যানের ভাষায়, ‘এটি ছিল এ ধরনের অভিযানগুলোর চমৎকার কৌশলগত একটি সাফল্য, কিন্তু সর্বনাশা কৌশলগত ব্যর্থতাও।’ তিনি লিখেছেন, ২০০৪ সালে গাজায় হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের হত্যাকাণ্ড এ আন্দোলনে ইরানের জড়িয়ে পড়ার পথ খুলে দেয়। লেবাননে ২০০৬ সালে হেজবুল্লার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ফলে তাদের নেতা হাসান নসরুল্লার মর্যাদা ও ক্ষমতা বেড়ে যায়।
সময়ে সাথে সাথে কিভাবে ইসরাইলের গুপ্ত ঘাতকরা আরও বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে তার বর্ণনাও বইটিতে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হত্যা মিশনে প্রধানমন্ত্রী ‘লাল কাগজে’সই করে অনুমতি দেন। এ ধরনের মিশনে যদি নিরপরাদ বেসামরিক লোক মারা গেলে একে ‘দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, আর গুপ্তঘাতককে ‘লক্ষ্য প্রতিরোধক কর্মকাণ্ড’হিসেবে অভিহিত করা হয়।

রনেন বার্গম্যান ইসরাইলের সবচেয়ে প্রচলিত দৈনিক পত্রিকা ‘Yedioth Ahronoth’-এর সামরিক এবং গোয়েন্দা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি। পাশাপাশি গোয়েন্দা, জাতীয় নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ, এবং পারমাণবিক বিষয় নিয়ে তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনেও লেখালেখি করেন। সাংবাদিকতায় তিনি ইসরাইলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ Sokolow লাভ করেছেন। ইসরাইলের গুপ্ত হত্যা মেশিনের তিনটি অংশ-ডিরেকটরেট অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, দ্য মোসাদ স্পাই এজেন্সি, এবং অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বাহিনী শিন বেত; এগুলোতে বার্গম্যানে চমৎকার যোগাযোগ সূত্র ছিল।

(এসকে/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮)

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স