Skip to main content

হুমকিতে পুরাকীর্তি, পর্যটনে স্থবিরতা

শাহনেওয়াজ খান


ছোট সোনামসজিদ

টিকে থাকা পুরাকীর্তি, কতকগুলোর ধ্বংসাবশেষ, সুন্দর ও নিরিবিলি পরিবেশ, সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা- সবই আছে। প্রত্নতত্ত্ব ও পর্যটন বিভাগের কার্যক্রমও নজরে পড়বে যে কারো। এর পরও কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা ও স্থবিরতায় হুমকিতে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাকীর্তিগুলো; সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতও গতি পাচ্ছে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের একটু সদিচ্ছাই পাল্টে দিতে পারে পুরো পরিস্থিতি।

প্রাচীন গৌড় অঞ্চলের অধিকাংশই পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়। কিছু অংশ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কিছু সময় গৌড়ের রাজধানী থাকা এই অঞ্চলে এখনো পুরনো নিদর্শন আছে বেশ। সুলতানি, সেন ও মুঘল আমলের স্থাপত্যগুলো এখনো পুরনো জৌলুসকে মনে করিয়ে দেয়। বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙা অবস্থায় থাকলেও অনেকটা পূর্ণাঙ্গরূপে টিকে থাকা স্থাপনার সংখ্যাও কম নয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এখানকার পুরাকীর্তিগুলো সংরক্ষণ তাই অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু এই সহজ কাজটিই যেন কঠিন করে তুলছে প্রশাসন। পাশাপাশি পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকেও বিনষ্ট করতে বসেছে।

ছোট সোনামসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, দারসবাড়ী মসজিদ, দারসবাড়ী মাদরাসা, খঞ্জনদীঘির মসজিদ, চামচিকা মসজিদ, তাহখানা, তিন গম্বুজ মসজিদ, শাহ্ নেয়ামতউল্লাহর (রহ.) মাজার, কোতোয়ালি দরোজা, ষাঁড়বুরুজ, আলী শাহপুর মসজিদ- পুরাকীর্তির আধার যেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এগুলোর প্রায় সবক’টিরই অবস্থান শিবগঞ্জ উপজেলায়। দূরত্বও বেশি নয়। দু-একদিনেই সব স্থাপনা ঘুরে দেখা যায়।

একই এলাকায় খনিয়াদীঘি, খঞ্জনদীঘি, বালিয়াদীঘিসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় দীঘি। প্রধান সড়কের পাশেই ছোট-বড় আরো দীঘির অবস্থান প্রকৃতিকে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে। বড় বড় আমবাগানের অবস্থানও শিবগঞ্জেই। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় আমের মোকাম। আমের মৌসুমে হাজারো ব্যবসায়ীই শুধু নয়, এই মহাযজ্ঞ দেখতে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও। এ ছাড়া ছোট সোনামসজিদ স্থলবন্দর ঘিরে ব্যবসায়ী ও বিদেশিদের সার্বক্ষণিক আনাগোনা তো আছেই।

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরই নয়, সরাসরি শিবগঞ্জে যাওয়া যায়। তবে সড়কের বেশিরভাগ অংশই ভাঙা থাকায় যাত্রীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। এ কারণে পুরাকীর্তিগুলোয় স্থানীয় দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও বাইরের দর্শনার্থী তেমন নেই বললেই চলে। এ ছাড়া থাকার জন্য ভালো মানের হোটেলেরও অভাব রয়েছে। সরকারি একটি মোটেল থাকলেও উদ্বোধনের আগেই তা বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে শিবগঞ্জের কানসাটে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও পর্যটন মোটেলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চালায় স্থানীয় জনতা। এতে সেখানে অবস্থানরত এক প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়। উদ্বোধনী ঘোষণার কয়েক দিন আগের এই ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় মোটেলটি।

তবে মোটেলটি শিগগিরই চালু হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও প্রশাসন) এসএম হুমায়ুন কবির সরকার। তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ছোট সোনামসজিদ মোটেলটি যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে। মোটেলটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, আগামী আট-নয় মাসের মধ্যে মোটেলটি চালু হতে পারে। তবে অনুন্নত রাস্তা-ঘাটের কারণে বাইরে থেকে এখানে তেমন পর্যটক আসেন না বলে জানান তিনি।

আশার খবর শোনান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন) মো. ইমরানও। তিনি বলেন, শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে স্থলবন্দর সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত সুলতানি আমলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকর্ম ছোট সোনামসজিদ। কিন্তু মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যান ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত দ্রুত বেগে চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটি। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু তা না মানায় বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী-রংপুর বিভাগ) নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সড়ক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগকে জানিয়ে আসছি। ২০০৮-০৯ সালে ছোট সোনামসজিদকে রক্ষায় পশ্চিম পাশ দিয়ে অপর একটি সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্তও হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে বিষয়টি নিয়ে আর এগোয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, দু-এক বছরের মধ্যে এর সমাধান হবে।’

শুধু ছোট সোনামসজিদই নয়, সুলতানি আমলের অন্য স্থাপনা ৫০০ বছরের পুরনো দারসবাড়ী মসজিদ ও মাদরাসার রক্ষণাবেক্ষণেও রয়েছে গাফিলতি। ওই অঞ্চলের পুরাকীর্তিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘এ নিয়ে একটি বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। তখন পুরাকীর্তিগুলো আরো ভালোভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে।’

Comments

Popular posts from this blog

হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না সম্রাট আওরঙ্গজেব

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওরঙ্গজেবের ইমেজ হলো একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবে , যিনি হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর যিনি নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এমনকি নিজের বড় ভাই দারা শিকোকে পর্যন্ত রেহাই দেননি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি বৃদ্ধ পিতাকে আগ্রার একটি দুর্গে তার জীবনের শেষ সাড়ে সাত বছর বন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি পাকিস্তানী নাট্যকার শাহীদ নাদিম লিখেছেন যে ভারত ভাগের বীজ সত্যিকার অর্থে সেদিনই বপন করা হয়েছিল , যেদিন আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাকে পরাজিত করেছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ১৯৪৬ সালের প্রকাশিত তার বই ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া ’ তে আওরঙ্গজেবকে একজন গোঁড়া ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তবে মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা তার বই ‘ আওরঙ্গজেব - দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথ ’ বইয়ে লিখেছেন যে আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ঘৃণা করতেন আর তাই মন্দির ধ্বংস কর

দাঁড়িয়ে পানি পান কি ঠিক?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : সময় কিংবা অভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করি। কিন্তু এই অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা ডেকে আনছি বিপদ। একটা নয়, একগুচ্ছ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। ভুগতে হচ্ছে কিডনি সমস্যায়। শরীরে পানির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভুল নিয়মে পানি, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে ঢকঢক করে পানি পানের অভ্যাসে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দাঁড়িয়ে পানি পানের কুফল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ে: পানি পানের পরেই শরীরের ছাঁকনিগুলো শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের ভিতরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। ফলে, শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। পাকস্থলীতে ক্ষত: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থারাইটিসের আশঙ্কা: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়ায় কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে আর্থারাইটিসের আশ

হরিণের রাজ্যে

শাহনেওয়াজ খান আমরা দশ-বারোজন মিলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলাম হরিণের পালটাকে। ৬০-৭০টা হরিণ হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে পালটাকে ঘিরে ধরেছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। শেষ সময়, সুতরাং সবাই চারদিক দিয়ে এক নিঃশ্বাসে দৌড় দিলাম হরিণের পালকে আটকাতে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! আমার দু’পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে হরিণ। এত জোরে দৌড়াচ্ছে যে পায়ের নিচের খুড়ের অংশগুলো ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হরিণের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা শুরুতেই তো বড় বড় শিং দেখে মারা গিয়েছিল। এখন দৌড় দেখে উল্টো চুপসে গেলাম। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করলাম, হে আল্লাহ, শিং বা খুরের আঁচড় যেন গায়ে না লাগে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, এটা সুন্দরবন বা বিদেশি কোনো সাফারি পার্কের দৃশ্য? না, এটা আমাদের গর্ব নিঝুম দ্বীপের গল্প। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর দ্বীপে যেখানে হরিণই চাঞ্চল্যের উৎস। তবে এই হরিণগুলো কিন্তু শুধু দ্বীপের পরিবেশকেই নয়, মানুষগুলোকেও ব্যস্ত রাখে। দল বেধে এসে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে শীত মৌসুমে গিয়েছিলাম নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স